দিন দিন অবনতি হচ্ছে দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি। এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জনবল এবং ডেঙ্গু চিকিৎসায় পর্যাপ্ত সরঞ্জামের ব্যবস্থা হলেই হাসপাতালটিকে পুরোপুরি ডেডিকেটেড হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।
এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম।
বুধবার (১২ জুলাই) তিনি জানান, ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মৌখিকভাবে এ ঘোষণা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা এখনও হয়নি। এ ব্যবস্থা হলে খুবই শিগগিরই পুরোপুরি ডেডিকেটেড হিসেবে হাসপাতালটিকে ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত সোমবার (১০ জুলাই) দেশে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালকে প্রয়োজনে
এক হাজার শয্যার ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করে দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও এখনও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। রাজধানীর অনেক হাসপাতালে এখনও শয্যা খালি রয়েছে, তবে রোগী বাড়ছে।
এবার দ্রুত ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। সরকারি হিসেবে এরই মধ্যে ৬১ জেলায় এডিস মশাবাহিত এ রোগ ছড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুকে বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা বিবেচনা করে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়নের পাশাপাশি দেশজুড়ে মশা নিধনের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তবে অনেক এলাকায় রোগী ব্যবস্থাপনার কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা বিপাকে পড়ছেন। মশা নিধন কার্যক্রম ঢিলেঢালা হওয়ায় ক্রমেই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ঢাকার বাইরে মোট রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৮৯৯ জন। আর জুলাইয়ের প্রথম ১১ দিনে শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৪ জন। গত ছয় মাসে ঢাকার বাইরে ১০ জনের মৃত্যু হয়। আর শেষ ১১ দিনে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৯৭, এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০৫ জন ঢাকার বাইরের। আর ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ২৯২ জন। মারা গেছেন ৮৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে মোট রোগীর ৯৯ শতাংশই ছিল ঢাকার। ২০১৭ সালে ৯৬ শতাংশ রোগী ছিল ঢাকায়, ঢাকার বাইরে ছিল ৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে শতভাগ রোগীই ছিল ঢাকার। ২০১৯ সালে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়, সে বছর ৫১ শতাংশ রোগী ছিল ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে ছিল ৪৯ শতাংশ। এরপর থেকেই ঢাকার বাইরের রোগী বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে ঢাকার ডেঙ্গু রোগী ছিল ৮৭ শতাংশ ও ঢাকার বাইরে ১৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ঢাকায় ৮৩ শতাংশ ও ঢাকার বাইরে ছিল ১৭ শতাংশ।
গত বছর ঢাকার বাইরে ৩৭ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। এ বছর এরই মধ্যে ঢাকায় ৬৯ শতাংশ ও ঢাকার বাইরে ৩১ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০২ রোগী সারাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে গত ১১ দিনে ৬ হাজার ৯১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৩৬ জন।
মন্তব্য করুন