দেশে চলমান বৃষ্টিপাত আরও পাঁচ দিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হওয়ায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
শনিবার (২২ জুন) রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আগামী ৫ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এসময় যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বান্দরবানে সর্বনিম্ন ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী শনিবার এই তিন বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে। এরপর থেকে আবার বৃষ্টি বেড়ে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার বিকেলের পরে ঢাকাতে হতে পারে। শুক্রবার ভোরেও ঢাকায় বৃষ্টি সম্ভাবনা আছে কিছুটা।
কমবে সিলেটের পানি, উত্তরে বন্যার শঙ্কা: আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সেইসঙ্গে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যার শঙ্কার কথাও জানিয়েছে পাউবো। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত গুরুতর বন্যা পরিস্থিতির ঝুঁকি কিছুটা কম। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, সিলেটে অতি ভারি বর্ষণের কারণে নদীর পানির বেড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছিল। এর ফলে মৌসুমি বন্যা লক্ষ্য করেছি। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনে তা উন্নতির দিকে যেতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, আপাতত আগামী দুইদিন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীসহ আশপাশের এলাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ঝুঁকি রয়েছে। তবে এটা পরবর্তীতে স্বাভাবিক হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলো যেমন ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। ফলে এসব নদীর পানি সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে।
সাত নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে : ভারি বৃষ্টিতে দেশের সাত নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমায় পৌঁছাতে পারে। এদিকে, গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে ও সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু-খোয়াই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। বিপৎসীমার ওপরে থাকা নদীগুলোর মধ্যে আছে—তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, পুরাতন সুরমা এবং সোমেশ্বরী।
মন্তব্য করুন