সরকার ঘোষিত জাতীয় বাজেটে ৬ কোটি শ্রমিকের জন্য আলাদাভাবে কোনো খাত বরাদ্দ না দেওয়া এবং শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা বরাদ্দ না করায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। আগামী ২৫ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।
শনিবার (২২ জুন) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলন এ বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ৬ জুন সরকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে। ১৯৭২-৭৩ সালে প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা, ৫৩ বছরে জাতীয় বাজেটের আর্থিক আকার বর্তমানে ১ হাজার ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপিতে ৫.৭ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এ হিসেবে মাসিক মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৫১২ টাকা। কথিত মাথাপিছু আয়, জিডিপি উন্নয়ন ও সুখী, সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ শিরোনামের বাজেট শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন বা অগ্রগতি ঘটায়নি। দেশ-বিদেশের মাথাপিছুর আয়ের এ খতিয়ানের গল্প প্রচার করা হলেও বাস্তবে এ হিসাব কাজির গোয়াল, খাতা কলমে আছে কিন্তু গোয়ালে গরু নাই।
তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের মাথা গোঁজার নিজস্ব কোনো আবাসন নেই। ৫৩ বছরের তুলনায় বর্তমানে ব্যাপকভাবে বেড়েছে আয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পদ ও খাদ্য বৈষম্য। শ্রমিক পরিবার জেলখানার কয়েদির চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে। ১৯৭২ সালে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন, ২০২৩ সালে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯শ জন। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বছরে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা শ্রমিকদের পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে। এদের স্বার্থেই সরকার কালো টাকা (অপ্রর্দশিত আয়) ১৫ শতাংশ কর দিলেই বৈধ বা সাদা টাকা হয়ে যাওয়ার নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এর ফলে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীরের মতো আরও কয়েক হাজার দুর্নীতিবাজ দুর্নীতি করতে আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় বাজেটে শিল্প বাজেট, কৃষি বাজেট, স্বাস্থ্য বাজেট, শিক্ষা বাজেট, প্রতিরক্ষা বাজেট ইত্যাদি বাজেট থাকলেও আলাদাভাবে শ্রমিকদের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দের খাত নেই। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠানে ১৪ লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাদে শুধু বেতন-ভাতার ব্যয় বরাদ্দ ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। কিন্তু বাজেটের এই টাকার অংক অথবা ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ ৬ কোটি শ্রমিকের স্বল্প মূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তার সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।
মাহবুবুর রহমান বলেন, উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা যতই বলা হোক না কেন বৈষম্য অসমতা নিরসন হবে না এবং ৩০ লক্ষ শহীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাও করা যাবে না। বাস্তবে এই বাজেট বানরের পিঠা বণ্টন গল্পের বিবরণ ছাড়া আর কিছুই না। এ বাজেটে ৬ কোটি খেটে খাওয়া শ্রমিকের অভাব অনটন আরও বাড়াবে। যেহেতু এ বাজেটে শ্রমিকদের জন্য কিছুই নাই সেহেতু বাংলাদেশের ৬ কোটি শ্রমিক এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করছে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন- টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক টিইউসির আইনবিষয়ক সম্পাদক কে.এম মিন্টু, শ্রমিক নেতা এফ.এম আবু সাঈদ ও আবু সুফিয়ান।
মন্তব্য করুন