স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কিত কোনো উদ্যোগ বা কাজ করতে গেলেই বাজেট নিয়ে কিছু মহল প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করে।
রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ওসমানী উদ্যানে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, অতীতে ফ্যাসিবাদের আমলে ভাস্কর্য নির্মাণ হতো, এমনকি তার চেয়েও ছোট অবকাঠামোর জন্যও বাজেট খরচ করা হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে। তখন এই ধরনের সমালোচনা দেখার কথা নয়, কিন্তু এখন সেটি বলা হচ্ছে শুধুমাত্র জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কিত কাজ হওয়ায়।
তিনি বলেন, কিছু মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের আলোচনা চালাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে জুলাই নিয়ে শহরে কোনো কাজ না করা যায়। তবে, জুলাইয়ের প্রেরণা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ অব্যাহত রাখা হবে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আরও বলেন, ৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’-এর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শহীদদের স্মরণের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’-এ শহীদদের স্মরণে ৯০ ফুট উচ্চতার একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ২০ ফুট উচ্চতার কংক্রিটের টাওয়ারের ওপর শহীদদের নাম খচিত ৭০ ফুট উচ্চতার ব্রোঞ্জের টাওয়ার থাকবে। স্মৃতিস্তম্ভের এলাকায় মোট ২০টি এপিটাফ স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া কার্ভ ওয়ালের বাইরের অংশে ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ ও ১৯৯০ সালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কংক্রিটের ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে।
এদিকে রোববার (১২ অক্টোবর) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আজকের সভায় মূলত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের সময় দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে যে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন কোনো আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানের বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বডি ওয়ার্ন ক্যামেরা সরবরাহের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের এবার যথাসম্ভব দায়িত্ব প্রদান থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে মাঠপর্যায়ে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়। আপনারা জানেন, এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনকালীন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তিনদিন মেয়াদি এই প্রশিক্ষণ সারা দেশের জেলা, মহানগর ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৩০টি ভেন্যুতে ২৮টি ব্যাচে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ব্যাচের (৬ হাজার ৫০০ জন) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ব্যাচের (৬ হাজার ৫০০ জন) প্রশিক্ষণ বর্তমানে চলমান। নির্বাচনের জন্য পুলিশের চূড়ান্ত বা চতুর্থ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ গত ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে শুরু হয়েছে এবং আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখের মধ্যে সব ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের জন্য ‘প্রাক-নির্বাচনী প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি কেন্দ্রে ১৩ জন করে আনুমানিক ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য মোট ৫ লাখ ৮৫ হাজার সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার জনকে অস্ত্রসহ এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার জনকে নিরস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন, যার জন্য ৩ হাজার ১৫৭ জন রিক্রুট সিপাহির প্রশিক্ষণ চলছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে বিজিবির ১ হাজার ১০০ প্লাটুনে মোট ৩৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ইতোমধ্যে তাদের ৬০ শতাংশ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে, যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যও নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
এ সময় জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণকে ঘিরে যেন কোনোভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া সভায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মন্তব্য করুন