দ্য নিউ গ্রেট গেম (২য় পর্ব)
আফ্রিকা হলো সেই থিয়েটার যেখানে গ্রেট গেমের ২১ শতকের সংস্করণ মঞ্চায়িত হচ্ছে। নাইজারের অভ্যুত্থান এই মঞ্চকে প্রকাশ্যে এনেছে। এই গেমের খেলোয়াড়রা হলো পশ্চিমা বিশ্ব, রাশিয়া ও চীন। পরাশক্তিদের এই খেলায় ঝুঁকিতে রয়েছে মহাদেশের কৃষি এবং বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ।
বিশ্বের মোট আবাদযোগ্য জমির ৬৫ শতাংশই আফ্রিকা মহাদেশের দখলে। বিশ্বের খনিজ সম্পদের প্রায় ৩০ শতাংশ, প্রাকৃতিক গ্যাসের ৮ শতাংশ এবং তেলের মজুদের ১২ শতাংশ রয়েছে আফ্রিকায়। এই মহাদেশে রয়েছে বিশ্বের ৪০ শতাংশ সোনা এবং ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রোমিয়াম এবং প্ল্যাটিনামের মজুদ।
বিশ্বের মোট কোবাল্ট, হিরা, প্ল্যাটিনাম এবং ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে বড় মজুদ আফ্রিকায়। এই সমস্ত কিছুর সাথে এর ভৌগোলিক অবস্থান একে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক খেলার মঞ্চে পরিণত করেছে। যেখানে রয়েছে পরাশক্তিদের ক্ষমতা এবং শক্তির প্রতিযোগিতা।
তবুও আফ্রিকা এই গ্রহের সবচেয়ে দরিদ্রতম মহাদেশ এবং আজও পশ্চিম দ্বারা সবচেয়ে নির্মমভাবে শোষিত মহাদেশ। উদাহরণস্বরূপ, নাইজার বিশ্বের অন্যতম ইউরেনিয়াম রপ্তানিকারক দেশ হয়েও জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৯১টি দেশের মধ্যে এর অবস্থান ১৮৯তম।
আফ্রিকায় পশ্চিমা উপনিবেশ ও আমেরিকা :
আফ্রিকা মহাদেশের দুর্দশার পেছনে অন্যতম কারণ পশ্চিমা ঔপনিবেশিকতাবাদ। ফ্রান্সের মতো পশ্চিমা ঔপনিবেশিকরা এখনও আফ্রিকা ছেড়ে যায়নি। ১৯৬০ সালে ফ্রান্স তার বেশিরভাগ আফ্রিকান উপনিবেশকে স্বাধীনতা দেয়—যেমন নাইজার, নাইজেরিয়া, মালি, বুরকিনা ফাসো, সেনেগাল এবং আইভরি কোস্ট। কিন্তু এখনও তাদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র কোনোকালেই আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন না করলেও এই মহাদেশে গত ৫০ বছর ধরে তারা অত্যন্ত সক্রিয় ছিল।
শীতল যুদ্ধকালীন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন লড়াইটা ছিল আফ্রিকা কেন্দ্রীক।
সোভিয়েতরা অফ্রিকায় পশ্চিমাদের ঔপনিবেশিক এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। সেসময় তারা অফ্রিকার দেশগুলোকে পরামর্শ, নগদ অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছিল। একইসাথে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল যাতে অফ্রিকায় পশ্চিমা উপনিবেশের পতন ঘটে।
অনেক আফ্রিকান দেশের বর্তমান নেতারা সেই স্মৃতি এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যের নৃশংস দিনগুলোর কথা মনে রেখেছেন।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনেট ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসির সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকার বেশিরভাগ মানুষ রাশিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচকভাবে দেখে। ইউক্রেনে যুদ্ধের শুরু থেকেই অফ্রিকায় রাশিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের নেতারা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার সীমানায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর পূর্বমুখী চাপকে দায়ী করেছেন। তারা ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেননি।
২০০৮ সালে আমেরিকা ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM)’ নামে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য একটি একক কমান্ড তৈরি করে। এরপর থেকে আফ্রিকায় আমেরিকান সৈন্য, সামরিক ঘাঁটি এবং ড্রোন হামলার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, আফ্রিকায় অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা ১৭০ শতাংশ বেড়ে ২৬০০ থেকে ৭০০০ এ পৌঁছায়। এই সময়ের মধ্যে সেখানে আমেরিকার সামরিক অভিযান, কর্মসূচি এবং মহড়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭২ থেকে ৩৫০০-তে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা সেখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু পেন্টাগনের নিজস্ব তথ্যে প্রকাশ পায়, AFRICOM প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আফ্রিকার দেশগুলোতে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। একইসাথে সেখানে সহিংসতার ঘটনাও দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাইজারের অভ্যুত্থান ঘটানো নতুন সরকারও বলেছে, তারা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে কারণ এই অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
২০১১ সালে আফ্রিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায় তার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে সরানোর অভিযানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো ছয় মাস ধরে দেশটিতে বোমাবর্ষণ করেছিল। গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত এবং হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তারপর থেকে দেশটি নৈরাজ্যের রাজ্যে পরিণত হয়েছে এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানে দেশটি।
পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, আফ্রিকাজুড়ে ১৫টি ভিন্ন ভিন্ন দেশে কমপক্ষে ২৯টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আমেরিকার। এসব ঘাঁটির মাধ্যমে তারা আফ্রিকার দেশগুলোতে তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করে এবং আফ্রিকার খনিজ সম্পদ দখল ও উত্তোলন করে।
আফ্রিকায় রাশিয়ার ভূমিকা :
সোভিয়েত ইউনিয়ন সমগ্র আফ্রিকাজুড়ে উপনিবেশের বিরুদ্ধে তাদের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করেছিল। স্বাধীনতার পর এসব দেশকে নগদ অর্থ এবং বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলে রাশিয়া। অবশ্যই রাশিয়া এটি তার স্বার্থেই করেছিল। তাদের আফ্রিকা নীতি ছিল এমন একটি কৌশল যাতে সারা পৃথিবীজুড়ে একটি ক্ষমতার প্রতিযোগিতা এবং ঠান্ডা যুদ্ধ চলমান থাকে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, রাশিয়া তার নিজের ঘরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বছরের পর বছর ধরে সংগ্রাম করেছে। সুদূর আফ্রিকার দিকে প্রথমে খুব কম নজর দিতে পেরেছিলেন পুতিন। কিন্তু রাশিয়ায় নিজের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করে ভ্লাদিমির পুতিন তার দৃষ্টি ফেরালেন দক্ষিণ-পশ্চিমের দিকে। তিনি রাশিয়াকে তার মহাশক্তির মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যাতে সমর্থনও পেয়েছেন জনগণের।
তিনি আফ্রিকান দেশগুলোকে নগদ অর্থ সাহায্য করলেন এবং সদয় ব্যবহার করলেন। একইসাথে তিনি আফ্রিকানদের পশ্চিমা উপনিবেশবাদের দুঃসহ স্মৃতিগুলোকে মনে করিয়ে দিলেন। যে সব দেশে এসব কৌশল কাজ করল না সেখানে তিনি সামরি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারগুলোকে উৎখাত করলেন।
আজ রাশিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মহাদেশের কেনা সমস্ত অস্ত্রের ৪৪ শতাংশ এসেছে আফ্রিকা থেকে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আফ্রিকায় বিনামূল্যে শস্য সরবরাহ করছেন পুতিন। আফ্রিকায় রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের হাজার হাজার সেনা রয়েছে। বুরকিনা ফাসো এবং মালি উভয় স্থানেই ওয়াগনারের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে।
রাশিয়া আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে, নাইজারে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন যুদ্ধের ক্ষেত্রে সামরিক জান্তাকে সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
এমনকি মস্কো যদি সরাসরি অভ্যুত্থানে জড়িত নাও থাকে, তবে তারা অবশ্যই পরিস্থিতিটিকে তার সুবিধার জন্য ব্যবহার করবে। নিউজ রিপোর্ট এবং ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, নাইজারের অভ্যুত্থানকে সমর্থন করার জন্য রাস্তায় নেমে আসা ভিড়ের মধ্যে রাশিয়ার পক্ষে শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে।
ইতোপূর্বে রাশিয়া মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেখানের পশ্চিমাপন্থি সরকারকে সরিয়ে দিয়েছে। এখন রাশিয়া দাঁড়িয়েছে নাইজারের নতুন শাসনের পেছনে।
মহাদেশে প্রভাব বিস্তারের জন্য রাশিয়া তার পারমাণবিক প্রযুক্তির ওপর জোর দিচ্ছে। মিসরে একটি অত্যাধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া, যেখানে ২৮.৭৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ব্যয়ে চারটি চুল্লি থাকবে। আরও কয়েকটি দেশের সাথে পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া। আফ্রিকায় বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের পর বিশ্ব জ্বালানি বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে আরও সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে পেয়েছে তারা।
যুদ্ধে আফ্রিকার অবস্থান থেকে এটা স্পষ্ট, পুতিন অন্তত তার কিছু লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয়নি এবং তাদের মধ্যে অনেকেই রাশিয়ার নিন্দা করে জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছে।
নাইজারের অভ্যুত্থান প্রমাণ করে, ইউক্রেন সংঘাত আফ্রিকার ইতিহাসকে ত্বরান্বিত করেছে। পুতিন অবশ্যই পশ্চিমের বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুলতে চাইবেন এবং মস্কো ইতোমধ্যে আফ্রিকায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। একটি নতুন ফ্রন্ট ব্যাপকভাবে সম্মুখযুদ্ধের দিকে হয়ত যাবে না। তবে ইতোমধ্যেই ভাড়াটে সেনাবাহিনী দ্য ওয়াগনার গ্রুপের নামে আফ্রিকার মাটিতে হাজার হাজার রুশ সৈন্য রয়েছে।
আফ্রিকায় রাশিয়া এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসায় এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীন তার নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত থাকবে। তবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে অনেক কিছুই হারাতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা এখনো আফ্রিকা ছেড়ে যায়নি। সুতরাং এটা আশ্চর্যজনক নয়, মহাদেশে গ্রেট গেমের ২১ শতকের সংস্করণ মঞ্চায়িত হচ্ছে। অনেক আফ্রিকান দেশ পশ্চিমের প্রতি সন্দেহ পোষণ করছে এবং রাশিয়া ও চীন তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য উর্বর স্থল খুঁজে পেয়েছে।
চীনের অংশগ্রহণ :
চীন ২০৪৯ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেসে শি জিনপিং এই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন। শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ ‘যৌগিক জাতীয় শক্তি’ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে চায় চীন। অসাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আফ্রিকা তার সেই লক্ষ্য অর্জনের চাবিকাঠি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার বিপরীতে, চীন তার সামরিক শক্তি ব্যবহার করেনি বা আফ্রিকার কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। পরিবর্তে, এটি মহাদেশকে জাগিয়ে তুলতে তার অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করেছে। চীন ইতোমধ্যেই আফ্রিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২১ সালে, চীন-আফ্রিকা বাণিজ্যের পরিমান ছিল $২৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আমেরিকা-আফ্রিকা বাণিজ্যের মূল্যের তিনগুণ বেশি।
বেইজিং আফ্রিকায় তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। চীনের পরিকল্পনা হলো- মহাদেশটিকে তার বিশাল অবকাঠামোগত ব্যবধান পূরণ করতে সহায়তা করা।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, আফ্রিকার প্রতি তিনটি বড় অবকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে একটি এখন চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগে নির্মিত এবং প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি চীনা ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত।
চীন আফ্রিকান দেশগুলোকে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণের ফাঁদে ফেলবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট, চীন এই প্রকল্পগুলো থেকে বিশাল সুবিধা অর্জন করবে।
বেইজিং আফ্রিকার খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম এবং বিরল ধাতু উত্তোলন করছে চীন যা আগামী বছরগুলোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
চীন শুধু আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদে আগ্রহী। তারা আফ্রিকার যতটা সম্ভব আবাদি জমি কিনতে চায়। সেসব জমিতে শ্রমিক হিসেবে স্থানীয় শ্রমের পরিবর্তে চীনাদের নিয়োগ দেওয়া হয় এবং চীনা কোম্পানিগুলোকে কাজ দেওয়া হয়। এসব উদ্যোগ থেকে চীন যা উৎপাদন করে তার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে প্রতিযোগীর আসনে বসেছে চীন।
বেশিরভাগ আফ্রিকান বেইজিং সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। সর্বোপরি, তারা দেখতে পাচ্ছে যে রাস্তা এবং সেতু তৈরি হচ্ছে। ফলে সেগুলো তাদের অনেক সাহায্য করছে।
১৮টি দেশে গবেষণা নেটওয়ার্ক আফ্রোবারোমিটারের ২০২০ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি লোক চীনের ‘অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব’-কে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছে।
চীন আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তহবিল প্রদান ও সৈন্য সরবরাহে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে। ১৯৮৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি চীনা শান্তিরক্ষী ২৪টি জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছেন। যা আফ্রিকায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্য চার স্থায়ী সদস্য- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের কর্মীদের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
ছুরির প্রান্ত :
বিশ্বব্যাপী সংঘাতের সর্বশেষ থিয়েটার হেসেবে এই মুহূর্তে আফ্রিকা একটি ধারালো ছুরির প্রান্তে বসে আছে। এটি মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরাশক্তিদের শক্তি প্রতিযোগিতার সর্বশেষ খেলাঘর যা ভূ-রাজনৈতিক শক্তি সমীকরণকে নতুন আকার দিতে পারে।
উভয়পক্ষই চেষ্টা করবে মহাদেশকে যতটা সম্ভব সংঘাতের দিকে টেনে আনতে, যা আফ্রিকায় একটি অন্তহীন যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।
সন্দীপন দেব : ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক
ফার্স্টপোস্ট থেকে ভাষান্তর - মুজাহিদুল ইসলাম
মন্তব্য করুন