সৈয়দ ফরহাদ
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৯ পিএম
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মুসলিম কিশোর হত্যা

ফরাসি বর্ণবাদ এবং সংস্কৃতি চর্চার আড়ালে বর্ণবাদের ক্ষত নিরাময়

ফরাসি বর্ণবাদ এবং মুসলিম কিশোর হত্যা। ছবি : সৌজন্য
ফরাসি বর্ণবাদ এবং মুসলিম কিশোর হত্যা। ছবি : সৌজন্য

একটা ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল চারদিকে ছড়িয়ে গেল। ১৭ বছর বয়সী নাহেলকে প্যারিসের শহরতলি নান্টেরের ট্রাফিক স্টপে এক পুলিশ অফিসার গুলি করে হত্যা করে। এরপর পুলিশের সাথে তরুণদের এক ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। জুনের শেষ দিকে এ ঘটনা ঘটে।

একেবারে সারা রাত ধরে কার, ময়লার ডাস্টবিন আর টাউন হলগুলো আগুনে জ্বলেছে। এরপর, সবকিছু নতুন করে শুরু করতে আগুন নেভানো হয়েছে। কিন্তু যারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল, তাদের মনে বাসা বেঁধেছে এক গভীর ক্ষত।

সংস্কৃতি কর্মীরা বলছেন, এই ক্ষত সাড়িয়ে তুলতে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কিছু মৌলিক সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। তারা বিশ্বাস করেন, সাংস্কৃতিক দাওয়াই অন্তত কিছু স্বস্তি এনে দিতে পারে।

আব্দেল ওয়াহেব সেফসাফও এই ক্ষত অনুধাবন করতে পারেন। ৫৩ বছর বয়সী সেফসাফ এই বছরের শুরু থেকেই নান্টেরে থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সার্ত্রভিল এবং ইউভলিন থিয়েটারের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন।

ফরাসি ঔপনিবেশিক যুগঃইতিহাসের কালো অধ্যায়

সেফসাফের বাবা-মা ১৯৪৮ সালে সেন্ট এটিনের কাছাকাছি দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের সামাজিকভাবে পশ্চাদপদ এক মহল্লায় এসে বসবাস করতে থাকেন। তখনও আলজেরিয়া ১০০ বছরের ফরাসি দখলদার থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।

সেফসাফ তার আলাপে ফরাসি উপনিবেশের সাথে সম্পর্কিত মানুষের মনের ‘গভীরে গেঁথে যাওয়া এক গভীর অস্বস্তি’র কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ‘জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা ইতিহাসের এই কালো দাগ নিয়েই আমাদের এ জীবন পার করে দিতে হবে’। ‘ঔপনিবেশিক আমলের অনেক কালো অধ্যায় আমাদের জানানো হয় না। ফলে শহরতলির তরুণরা সঠিকভাবে তাদের ইতিহাস এবং আত্মপরিচয় জানে না’। পাশাপাশি সেফসাফ এ-ও মনে করেন— দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের উৎস হলো বেকারত্ব, বৈষম্য এবং শিক্ষায় সমান সুযোগের অভাব।

২০০৫ সালে প্যারিসের এক শহরতলিতে দুজন তরুণ পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় যখন তাদের হত্যা করা হয়, তারপর ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। ‘তরুণরা তাদের আত্মপরিচয় সম্পর্কে না জানলেও, উপনিবেশের ট্রমা কিন্তু তাদের প্রতিদিনই তাড়া করছে’ বলেন সেফসাফ। তিনি অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশের নিজস্ব পথ খুঁজে বের করেছেন। ১৮৭১ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবার অপরাধে ২০০ জন আলজেরিয়ানকে প্যাসেফিক নিউ ক্যালেডনিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হয়। সেফসাফ এই বিষয়কে উপজীব্য করে নাটক মঞ্চস্থ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উপনিবেশের ক্ষত উপশমের জন্য এ আমার একান্ত নিজস্ব পথ’। ‘এ ধরনের নাটক কিন্তু অন্যদেরও ট্রমা মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে। আমরা যারা শিল্পী, তারা আমাদের মতো করে দায়িত্ব পালন করতে পারি’। এভাবেই সেফসাফ নিজের কাজটুকু করে যান। তিনি তার নাটকের শিল্পীদের নিয়ে শহরতলির স্কুলে থিয়েটার ওয়ার্কশপ করেন, এই শিল্পীরা মূলত দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দা। যদিও সেফসাফ মনে করেন, কেবল রাজনীতিই পরিস্থিতির মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। ‘রাষ্ট্রকে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঔপনিবেশিক ইতিহাস পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কেবলমাত্র এর মধ্য দিয়েই উপনিবেশিত এবং ঔপনিবেশিক প্রভুদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া গড়ে উঠতে পারে। চির অনুশোচনার পথে হাঁটার চেয়ে এটাই বরং ভালো’। এমনটাই বলেন সেফসাফ।

তিনি মনে করেন শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো উচিত, এতে করে সুযোগের সত্যিকারের সমতা গড়ে উঠবে। ‘একজন তরুণের শিক্ষার সুযোগ তৈরি হলে তারা মনে করবে যে ফ্রান্সে তাদের জীবন ভালোভাবে চলতে পারে। বহু হতাশার মাঝে এটাকে তারা সমাধান হিসেবে দেখবে’।

অভিবাসীদের প্রতি বর্ণবাদ

কুইনকেইলারি মডার্ন থিয়েটারের পরিচালক বেঞ্জামিন ভিলেমেগনে মনে করেন অভিবাসীদের এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই দায়ী। সেফসাফের মতো তিনিও সেন্ট এটিনেতেই বেড়ে উঠেছেন। শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম নেওয়া বেঞ্জামিনকে গায়ের রঙ নিয়ে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে না হলেও তার বহু বন্ধুদের এর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার বহু আরব-আফ্রিকান পরিবারে জন্ম নেওয়া বন্ধুদের কিন্তু পুলিশি দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে’। বেঞ্জামিন রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদের বিষয়টিও এড়িয়ে যেতে পারেননি।

তিনি এ-ও মনে করেন, রাষ্ট্রকে শুধু শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করলে চলবে না। ‘দেখুন, সমাজের এই বৈষম্য মোকাবিলায় আমাদের বিচারব্যবস্থা এবং পুলিশ বাহিনীতেও ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন’। থিয়েটারও তার মতো করে ভূমিকা রাখতে পারে কিন্তু আমাদের একটি মৌলিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। বেঞ্জামিন যোগ করেন- ‘আপনি যেভাবে মলিয়েরের মতো ধ্রুপদী নাটকগুলো আজও মনোযোগ দিয়ে দেখেন, ঠিক একইভাবে অভিবাসী সংকটের মতো সমকালীন সংকটগুলোও সবার মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে’।

পরিচয় জানতে পুলিশি হেনস্তা

সংগীতশিল্পী ক্রিস্টো নাম্পুবির ক্রমাগত পুলিশি তল্লাশির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া এই কৃষ্ণাঙ্গ সংগীতশিল্পীর জীবনের প্রথম ২২ বছর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ক্যামারুনে কেটেছে। এরপর তিনি সেন্ট্রাল প্যারিসে চলে যান। তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার আমার বোনের সাথে দেখা করতে খুব দেরি হয়ে যাওয়ায় দিনে-দুপুরে আমি রীতিমতো দৌড়াচ্ছিলাম। ঠিক তখনই একটা পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে আমাকে তাড়া করল। এরপর পুলিশ অফিসার আমাকে মাথার উপর হাত রাখতে নির্দেশ দিল আর আমার শরীরে তল্লাশি চালাল। আমি কিন্তু কিছুই করিনি’। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নাম্পুবি এ কথাগুলো বলেন।

বর্তমানে ৫৯ বছর বয়সী এই সংগীতশিল্পী প্যারিসের কাছাকাছি, ফ্রান্সের মূল ভূ-খণ্ডের সবচাইতে দরিদ্র এলাকা সেন্ট ডেনিসের একটি মিউজিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং সামাজিকভাবে বঞ্চিত এলাকাগুলোর সহস্কুলের মিউজিক গ্রুপেরও নেতৃত্ব দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ছাত্ররা সারা বিশ্বের গান শোনে শেখার এবং অনুভব করার চেষ্টা করে’। ‘তাদের কেউ কেউ স্কুলে ভালো না করলেও, আপনি দেখবেন, শুধু সংস্কৃতির কারণে, তাদের মিউজিক সেন্স কিন্তু বেশ ভালো। আর এই বিষয়টাই তাদের এই বোধটুকু দেয়, তারাও বিশেষ কিছুতে ভালো’।

সাম্প্রতিক অস্থিরতায় নাম্পুবি বিস্মিত হননি। ‘দুপক্ষের কেউই কারও কথা শুনছে না। একদিকে পুলিশ বাছবিচার ছাড়াই ধরে নেয় যে তরুণরা সবসময়ই একটা ঝামেলা পাকাতে চায়। আর অন্যদিকে, বাস্তবতা হলো— আজকের এই গতিশীল দুনিয়ায় তরুণদের আদতে কোনো কিছু শোনার তেমন ধৈর্য তো নেই-ই বরং তারা যে কোনো প্ররোচনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়’।

কথায় কথায় নাম্পুবি বলেন, শেষের বিষয়টায় সংগীত সাহায্য করতে পারে। ‘সংগীতের মাধ্যমে অনেক কিছু থেকে আপনার দূরত্ব তৈরি হবে। আর এই বিষয়টা আপনাকে আপনার অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করবে। কারণ সংগীত আমাদের আনন্দ দেয়, এটা অনেকটা ব্যথা উপশমের মতো কাজ করে। ভালো সংগীতশিল্পী হতে হলে আপনাকে অনেক সময় নিয়ে চর্চা করতে হবে। এই পরিমাণ শ্রমের জন্য দরকার অধ্যবসায়, যার প্রতিদান আপনি পাবেন। আর এই সবকিছু আপনার দৃঢ় মানসিকতা এবং নিরাপত্তাবোধ গড়ে তুলবে’।

ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া কঙ্গোলিস এক অভিবাসীর কন্যা সালোমে বসোকুর জন্য সংগীত অবশ্য জীবনদায়ী ব্যাপার। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণী প্যারিসের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের ট্রয়েসে মায়ের কাছে বড় হয়েছেন। স্কুলের একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে হওয়ায় প্রথম প্রথম নিজেকে তার বিচ্ছিন্ন মনে হতো।

‘আমার চার বছর বয়স থেকেই কেউ আমার সাথে খেলতে চাইত না, কারণ আমি দেখতে ওদের মতো নই। স্কুলের এক্সট্রা কারিকুলার পিরিয়ডে আমি সবসময় একা হয়ে যেতাম। তাই আমি করতাম কী, একটা বেঞ্চিতে একা একা বসে গান গাইতাম’ বলেন বসোকু। তার মা অড জব (odd job) করে অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছিলেন, পাশাপাশি কিছু সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা হয়েছিল বলে শহরের কনজারভেটরিতে বসোকুর সংগীত শিক্ষা সম্ভব হয়।

‘সংগীত হলো আমার আশার আলো। ছিল এবং আছে। সংগীত আমার মনোবলের উৎস। আমার যত দুঃখ, রাগ আর বোঝাতে না পারা যত অনুভূতি— যেগুলো আমি কোনোদিনই ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনি- এই সব অব্যক্ত অনুভূতি আমি আমার গানে অথবা পিয়ানো বাজিয়ে ব্যক্ত করি’ বলেন বসোকু।

বসোকু মনে করেন, আরও বেশি করে তরুণদের নিয়মিত সংগীত শেখার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। ‘এটা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের ভিন্ন একটি পথ বাতলে দেবে’। তিনি বর্তমানে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। কিন্তু সংগীত তাকে সারাজীবন সঙ্গ দেবে।

লিসা লুই: সাংবাদিক

কানতারা ডট দে থেকে ভাষান্তর: সৈয়দ ফরহাদ

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, আজই আবেদন করুন

রাজনীতিতে শিষ্টাচার-শুদ্ধাচারের আবশ্যকতা 

‘ফকিন্নির বাচ্চা’ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন রুমিন ফারহানা

সৌম্যদের অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন মোহাম্মদ মিঠুন

স্বর্ণকারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় হোতাসহ গ্রেপ্তার ৭

বিদ্রোহী কবির মৃত্যুবার্ষিকী / ‘বিদ্রোহী কবি’, ‘প্রেমের কবি’, ‘সাম্যের কবি’র প্রতি রইল অকৃত্রিম শ্রদ্ধা 

ফোনের টাচ স্ক্রিন কাজ করছে না? চেষ্টা করুন এই ৬ উপায়

অতিরিক্ত শুল্কের চাপে বন্ধ হচ্ছে ভারতের বড় শহরের পোশাক উৎপাদন

ভক্তদের সঙ্গে নামের অক্ষর খেলায় মেতেছেন মেহজাবীন

নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুমোদন ইসির, যে কোনো সময় প্রকাশ

১০

‘স্যার সময়মতো ক্লাসে আসেন না’ বলায় ৩৩ ছাত্রকে বেধড়ক পেটালেন শিক্ষক

১১

চাকরির প্রলোভনে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে

১২

টানা ৫ দিন বজ্রবৃষ্টি হতে পারে যেসব এলাকায়

১৩

বয়স বাড়লেও ব্রেন ঝকঝকে রাখার ৪ উপদেশ নিউরোলজিস্টদের

১৪

ফজলুর রহমানের বক্তব্যের কারণে দল বিব্রত : প্রিন্স

১৫

শুল্ক কার্যকর হলো আজ, কীভাবে সামলাবেন মোদি?

১৬

শিক্ষার্থীদের পুলিশের ধাওয়া, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

১৭

আবারও নিষিদ্ধ হতে পারে ভারতের ফুটবল

১৮

ডানা মেলেছে স্বপ্নের পাঁচপুকুরিয়া সেতু

১৯

সীমান্তে ১১ বাংলাদেশিকে বিএসএফের পুশইন

২০
X