ড. মো. আনোয়ার হোসেন
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

গুম থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান

গুমের শিকার ব্যক্তির পরিস্থিতি নিয়ে গ্রাফিক্স। ছবি : সংগৃহীত
গুমের শিকার ব্যক্তির পরিস্থিতি নিয়ে গ্রাফিক্স। ছবি : সংগৃহীত

আজ আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। গুম বলতে বোঝায় যখন কোনো ব্যক্তিকে আইনসম্মত প্রক্রিয়া ছাড়া গোপনভাবে অপহরণ বা আটক করা হয় এবং এরপর তার অবস্থান বা কী ঘটেছে তা স্বীকার করতে অস্বীকার করা হয়, এটি একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ, যেমন - স্বাধীনতার অধিকার এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার অধিকারকে খর্ব করে।

গুম একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অনেক সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন বা ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কৌশল ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার মাধ্যমে। গুমকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি গুরুতর মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়। এটি একটি মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন যেখানে ব্যক্তির ভাগ্যে কী ঘটেছে তা তার পরিবার ও সমাজের কাছে অজানা থাকে। এটি কোনো বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই ঘটে এবং ব্যক্তিকে আইনের সুরক্ষা থেকে দূরে রাখা হয়। রাষ্ট্র বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিটির সম্পর্কে তথ্য দিতে অস্বীকার করে, যা তাকে ‘আইনের বাইরে’ রাখে।

জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী গুমের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, স্মরণ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করবে আজ সকাল থেকে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এই দিবস পালন করে।

বাংলাদেশে বলপূর্বক গুম হওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা মনগড়া পূর্ববর্তী সরকারের গুমের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে বিগত ৫৪ বছরব্যাপী গুমের ঘটনা ঘটলেও, গত ১৫ বছরে গুম হওয়ার পরিসংখ্যান আলোচনায় রয়েছে। আলোচিত গুমের পরিসংখ্যানে বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংখ্যা উল্লেখ করছেন। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, গুমের শিকার বেশির ভাগ মানুষই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

বাংলাদেশে ‘মায়ের ডাক’ আর ‘মায়ের কান্না’ সংগঠন দুটির জন্মই কষ্টদায়ক গুমের ঘটনাকে বিষয়বস্তু করে। আবার দুটির আগে-পিছেই রাজনীতি-অতিরাজনীতির সংযোগ। একবার এ অতিরাজনীতির মাঝে পড়ে গেয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ নিয়ে হয়েছিল রাজনীতি আর কূটনীতির ধ্রুপদি রসায়ন। কূটরাজের এ সন্ধিক্ষণকে ঘিরে এগোচ্ছিল নানা কসরত।

মায়ের ডাক হল এমন সব পরিবারের একটি প্ল্যাটফর্ম যারা বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে সরকারি সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যের পরিণতি জানার জন্য এই প্ল্যাটফর্মটি চালু করে, যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে নিখোঁজ হয়েছিল।

গত কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাকে’ সম্পৃক্ততা বেশি বিএনপির। কারণ গুমের শিকারদের বেশিরভাগই দলটির কারও সন্তান বা স্বজন। ‘মায়ের ডাকের’ নানা কর্মসূচিতে যুক্ত হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পতিত সরকার তাদের অভিযোগকে সেভাবে আমল দিতে নারাজ ছিল। অগ্রাহ্য-তাচ্ছিল্যও করছে কখনো কখনো। গুমের নামে কে কোথায় ঘুমাচ্ছেন, বিয়ে করে অজানা জায়গায় ঘুরছেন, পাওনাদারের ভয়ে লুকিয়ে আছেন-ধরনের কথা এসেছে সরকারের তরফে। অবৈধভাবে বিদেশ কথা এসেছে সরকারের তরফে। অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার পথে ভূ-মধ্যসাগরে ডুবে মারা যাওয়াদের নামও গুমের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বয়ং পতিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আবার গুম নাটকের কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণ করেও ছাড়া হয়েছে। মায়ের ডাক আর্জেন্টিনার মাদারস অফ দ্য মায়ো’র মতো যা আর্জেন্টিনার মায়েদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যাদের সন্তান ১৯৭৬ এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে সামরিক স্বৈর শাসনের সময় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ‘নিখোঁজ’ হয়েছিল।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মায়ের কান্নারাও স্বজন হারানোর বেদনাহত। ২০১৪ সাল থেকে পরিচিত মায়ের ডাকের বিপরীতে ‘মায়ের কান্না’ মাঠে আসে ২০১৮ সালে, তারাও বেশ চাঙ্গা হয়েছিল। সরকারের কাছে তারা বিচার চেয়ে মায়ের ডাকদের মতো নিগৃহীত হয়েছিলেন ঘটনা এমন নয়। বরং ‘মায়ের কান্না’র পেছনে সরকারি মহলের পৃষ্টপোষকতা আর লুকিয়ে রাখার পর্যায়ে ছিল না। যে আমলেই হোক, গুমে হোক, নিখোঁজে হোক, আর বিচারের নামে অবিচারেই হোক; স্বজনহারাদের বেদনা কেবল ভুক্তভোগী স্বজনরাই জানেন। বাদবাকিদের এখানে সমবেদনা জানানো ছাড়া করণীয় তেমন কিছু থাকে না। কিন্তু, অন্যের শোককে নিজের সুখ বানাতে গিয়ে খোদার আরশ কাঁপানো রাজনীতির এ নোংরা চর্চার মধ্যে আবার কূটনীতিও চলে এসেছিল। তাও ‘অতি’ পর্যায়ে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা বা হাসি দিয়ে কাশি ঢাকা নয়, এক শোকাহতদের আরেক শোকাহতদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়ার এ রাজনীতির মাঝে আবার খুচরা কূটনীতি। এ কেমিস্ট্রির ক্রিয়া-বিক্রিয়া অনেকদূর গড়িয়েছিল। কান্না দিয়ে আর্তনাদ রোখার এ সার্কাস চেয়ে চেয়ে দেখা বিবেকমানদের জন্য বড় বেদনার ছিল।

মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম করতে গিয়ে আমি মাদক চোরাকারবারী কর্তৃক অপহরণের শিকার হওয়ার ঘটনাটি সংক্ষেপে আলোকপাত করছি। ২০১২ সালের আগস্ট মাসের ঈদের পরই আমি দিনাজপুরে যায়। দিনাজপুরে নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দাউদপুর ডিগ্রি কলেজে মাদকবিরোধী কর্মসূচি করে থাকি। কলেজটি বাংলাদেশ-ভারতের হিলি সীমান্তের নিকটবর্তী। কর্মসূচিটি সম্পন্ন করে একদিন পর আমি সিলেটে যায়। সিলেট উপশহরের একটি হোটেলে আমি রাত্রিযাপন করি। হোটেল থেকে অন্যত্র যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হই। তারা আমার মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ন্ত্রণে নেয়। আমার পরিবার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) আমার পরিবারকে বলেন, বাহিনীটি অভিযান পরিচালনা করতে প্রস্তুত রয়েছে এবং সিম অলরেডি ট্রাক করা হয়েছে, এই সিমটি ভারত সীমান্তে চলে যাচ্ছে।

তারা আরো যোগ করেন, ভিকটিম (আমাকে) জীবিত ফেরত দিতে পারবে কিনা, এ নিয়ে তারা সন্ধিহান। কারণ এত বড় দুঃসাহসিক ঘটনা সম্ভবত আন্তর্জাতিক চক্র ঘটাতে পারে। আমি বুঝতে পেরেছি যে, র‌্যাব ঠিকই বুঝতে পেরেছিল যে আমাকে তারা তামাবিল সীমান্তে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ছিল চক্রটির সম্পূর্ণ ধোঁকা। কারণ তামাবিল সীমান্তের কাছাকাছি গিয়ে তারা আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয়। এ সীমান্ত দিয়ে তারা আমাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করে নাই। তামাবিল গিয়ে তারা মূলত বাংলাদেশ সরকারকে জানান দিয়েছেন আমাকে ভারত নিয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো তারা ওখানে গিয়ে আমার সিম বন্ধ করে দেয়, অর্থাৎ গভমেন্ট-কে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে এবং গতিপথ পরিবর্তন করে যশোর নিয়ে যায়, অতঃপর অজপাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে ভারত নিয়ে যায়। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করলে আমাকে উদ্ধার করা সম্ভব ছিল। যদিও অপহরণকারীরাও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।

অপহরণকারীরা আমার ইমেলের পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য তথ্য নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তারা মূলত তথ্য চাচ্ছিল। তথ্য না দিলে আমার মাথায় পিস্তল/রিভলবার তাক করত। তথ্য দিতে না পারলে বা তথ্য দিতে ব্যর্থ হইলে তারা অভিনব কায়দায় টর্চার করত। তাদের নিয়ন্ত্রণ আমি প্রায় চার মাস ছিলাম। অপহরণকারী আমার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড হতে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়। আমার জীবন রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক এই মাদক চোরাকারবারী চক্রকে ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রদান করে। এই চক্রটির খপ্পরে থাকাকালীন তাদের কথোপকথনে আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, প্রতিবছর বাংলাদেশে তাদের কয়েক হাজার কোটি টাকার মাদক কারবার রয়েছে।

ভারত সরকার আমাকে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে। কিছুটা সুস্থতা বোধ করলে আমি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করি দ্রুত আমাকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি প্রদান করতে। এক পর্যায়ে ভারত সরকার ক্লিয়ারেন্স ইস্যু করে।

তথাপি বাংলাদেশ হাইকমিশন নয়াদিল্লি এবং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং ভারত সরকার আমার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গোপনীয়তা রক্ষা করে কৌশলী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন। সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।

আমি সুস্থ হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসলে তৎকালীন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি সংবাদ সম্মেলন না করার শর্তে আমাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে সম্মত হন। সকল শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অফিসিয়াল আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল শাখাকে আমার কার্যক্রমে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের মাধ্যমে দুইবার এ বিষয়ে তদন্ত করেন। প্রতিটি তদন্তে আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন।

অতিব পরিতাপের বিষয়ে যে, যতই দিনাতিপাত করছি, ততোই আমরা যেন অবিবেচক হয়ে যাচ্ছি। বিগত সরকারের সময় একজন বিরোধী দলীয় নেতা, যিনি তার দলের মুখপাত্র থাকাকালীন গুম হয়েছিলেন। তাকে কোন এক সকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানীর শিলংয়ে খুবই অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে শিলং আদালতে মামলা হয়। মামলার বিবাদী স্বয়ং ভারত সরকার। ভারতের আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ভারত সরকার তার বিরুদ্ধে আপিল করলেও উচ্চ আদালতের রায়ও তার পক্ষে যায়। আদালত হতে খালাস পেয়ে তিনি বাংলাদেশে আসতে চাইলেও, তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার খুবই অমানবিকতার পরিচয় দিয়ে তাকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাভেল পাস হতে বঞ্চিত করে। ফলশ্রুতিতে তিনি প্রায় এক যুগ ভারতে অবস্থান করতে হয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা অধিষ্ঠিত হলে তিনি নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার হতে ট্রাভেল পাস গ্রহণ করে নিজভূমিতে ফেরত আসতে সমর্থ হন। তিনি একজন সজ্জন ও ওয়েল এডুকেটেড ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমি জানি। যেহেতু তিনি রাজনীতিবীদ, সেহেতু তিনি দেশে এসে স্বাভাবিকভাবে তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ করতে থাকেন। এ অবস্থায় কয়েকজন ব্যক্তি তাকে ভারতের দালাল-সহ বিভিন্ন ধরনের তকমা দিতে থাকেন। তাদের যুক্তি আমার নিকট খুবই দৃষ্টিকটু ও অমানবিক মনে হয়েছে। তারা যুক্তি প্রদান করেন যে তিনি অপহরণ হলে ভারতে এত ভালো বাসস্থানে কিভাবে ছিলেন? বাস্তবতা হল আদালত তাকে জামিন জামিন প্রদান করেন এবং তাকে নিজের মতো করে নিজ খরচে বাসস্থানে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। যুক্তি প্রদানকারীদের ভাবখানা এমন যে তাকে ভারত সরকার কেন গোয়াল ঘরে রাখলো না। অথবা তিনি কেন মরে প্রমাণ করলেন না যে তিনি আসলে অপহৃত হয়েছেন। এভাবে মরার উপর খাড়ার ঘা দিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ কি আনন্দ পান উহা আমার বোধগম্য নয়।

এ অবস্থায় বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর হতে অদ্যাবধি বলপূর্বক গুমের সঠিক পরিসংখ্যান প্রণয়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি বলে মনে করি। দেশের সব নাগরিককে গুম থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং গুমের শিকার সব নিখোঁজ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

(লেখক : প্রাবন্ধিক, কথা সাহিত্যিক, প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল)।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চোখের পাতা লাফানো কি অশুভ, নাকি কোনো রোগের লক্ষণ

সিডনিতে রুশ কনস্যুলেটের গেটে গাড়ির ধাক্কা, অতঃপর...

চবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর ১০৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

ফাইনালে হারের পর সুয়ারেজের বিতর্কিত কাণ্ড!

হাত-পায়ের ৫ লক্ষণে বুঝে নিন লিভারে সমস্যা ভুগছেন কি না

হাসি, বিনা মূল্যের থেরাপি : তিশা

হল ছাড়ছেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা, আন্দোলনের ঘোষণা একাংশের

ভিসা নিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কঠোর বার্তা

গোলের বদলে ডিম! পাখির কারণে মাঠছাড়া ফুটবলাররা

১০

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, নিহত বেড়ে ২৫০

১১

নিজেদের অজান্তেই গাজায় বড় সফলতা পেল ইসরায়েল

১২

সিইসির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক দুপুরে

১৩

ইন্দোনেশিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী অবস্থান, আন্দোলনে নতুন মোড়

১৪

প্রিন্স মামুনের সেলুন কেনা নিয়ে মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস

১৫

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

১৬

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৭

আফগানিস্তানে কেন বারবার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানছে

১৮

সাদাপাথরে যে সৌন্দর্য ফিরবে না আর

১৯

আগস্টের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আসেনি ৯ ব্যাংকে

২০
X