ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে যানজট কমানো ও উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। একইসঙ্গে যানজটের সমস্যা নিরসনে ১১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে এবি পার্টি।
বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। রাজধানীর বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়িত হলে যানজটের সমস্যা থেকে নগরবাসী মুক্তি পেতে পারেন। প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. দেশি-বিদেশি সদস্যের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করা। এ কমিশন পরামর্শ দিতে ও অর্থসংগ্রহের পরামর্শ দেবে। ২. ঢাকায় প্রাইভেটকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা। ৩. শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ৪. সড়ক আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৫. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড করতে হবে। ৬. ফুটপাত হকার মুক্ত ও হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ৭. পার্কিং স্পেইস বাড়ানো। ৮. পুলিশ/বিআরটিএ কে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। ৯. পরিবহন শ্রমিক/মালিক সমিতি নিয়ন্ত্রণ করা। ১০. গাডড়ি রেকার/তুলে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। ১১. কোম্পানিভিত্তিক রুটের বাস নামানো দরকার, তাহলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমে যাবে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির যুগ্ম আহবায়ক বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব এবিএম খালিদ হাসান ও মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ট্রাফিক পুলিশের অব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা না করানো, মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও তার সহোযোগিদের চাঁদাবাজি, মূল রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং ও রাস্তার উপর দোকান বসিয়ে রাজধানীসহ দেশের মূল শহরগুলোর পুরো পরিবহন ব্যবস্থাই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষের অমূল্য সময় নষ্ট হচ্ছে। এই অব্যবস্থাপনা দূর করতে অবিলম্বে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় যানজট কমানো ও উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, রাস্তায় ফুটপাত, ময়লার ভ্যান, যত্রতত্র গাড়ি রেখে রাস্তাকে সংকীর্ণ থেকে আরও সংকীর্ণতর করে ফেলা হচ্ছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করার ফলে রাস্তার স্বাভাবিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া চালকের অদূরদর্শিতা, শহরমুখী মানুষের স্রোত, অপ্রশস্ত রাস্তা প্রভৃতি বিষয়ও যানজটের অন্যতম কারণ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, রাস্তার স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি, ফুটপাত ও রাস্তা দখল, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতা-এসব মিলে এই যানজট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে সবকটি মেট্রো লাইনের কাজ শেষ হলেও যানজট কমবে না, যদি বাস সার্ভিসের উন্নতি না হয়। কারণ, তখনো মোট যাত্রীর ১৭ শতাংশ মেট্রো ব্যবহার করবেন। অন্যদের ভরসা থাকবে বাস। ঢাকায় সড়ক আছে মোট ভূমির ৭-৮ শতাংশ, একটি মেগাসিটিতে শহরের আয়তনের ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকতে হয়। এসব সড়কের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আবার পার্কিং ও হকারদের দখলে থাকে। শহরের হাতে গোনা কয়েকটি সড়ক ছাড়া বেশির ভাগ সড়কের ফুটপাত দিয়েই হাঁটার জো নেই। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএসহ নানা সংস্থার কার্যক্রম এর সঙ্গে জড়িত।
মঞ্জু বলেন, আমাদের ছাত্ররা বেশ কয়েকদিন লেন মেইনটেইন করে সুন্দরভাবে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছে। বর্তমান সমস্যায় যেহেতু আমাদের সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে সেহেতু ছাত্রদের ও পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী সমন্বয় করে পাইলট প্রজেক্ট আকারে তিন মাসের জন্য ঢাকার ট্র্যাফিক সিস্টেম সুশৃঙ্খল করা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা, ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে ট্র্যাফিক সিস্টেম স্বাভাবিক করার স্বার্থে এবি পার্টি ঘোষিত প্রস্তাবনা সমূহ অবিলম্বে বিবেচনায় নেওয়ার আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, মোস্তফা বিন মালেক, যুবপার্টির সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক, উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুনা হোসাইন, শাহিনুর আক্তার শীলা, রিপন মাহমুদ, শরন চৌধুরী, মশিউর রহমান মিলু, আমেনা বেগম, সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য করুন