পুরান ঢাকার ধোলাইখালে গত শনিবার (২৯ জুলাই) পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় আহত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
ওইদিন দুপুরের দিকে পুলিশ ভ্যানে করে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে আপ্যায়নও করা হয়। সে সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদকে মশকরা করে ইঙ্গিতপূর্ণ খোঁচা দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
রাজধানীর নয়াপল্টনে রোববার (৩০ জুলাই) দুপুরে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সেসব কথা জানান এই বিএনপি নেতা।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘হারুন বলছে, প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছেন গয়েশ্বরের কী হয়েছে, তাড়াতাড়ি তার চিকিৎসা করো, তাকে ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছে দাও।’
তখন তিনি ঠাট্টা করে হারুনকে বলেন, ‘তোমাকে এর আগে যে আইনটা দিয়েছিল, ভালো করে ধোলাই দাও, তারপর হাসপাতালে নাও সেটা তো বললে না। আমার তো মনে হয় তোমার চাকরি যাওয়া উচিত যে প্রধানমন্ত্রীর এ রকম একটা শত্রু তুমি হাতের সামনে পেয়ে কবরে পাঠাতে পারলে না। ইউ শুড বি সাসপেন্ড। ওসি শুড বি সাসপেন্ড ফ্রম চার্জ। এতগুলা গুলি ছাড়ল, এতকিছু করল, একটা গুলি আমার গায়ে লাগাতে পারল না। তোমাকে প্রধানমন্ত্রী চাকরিতে রাখবে কেন, তোমার কোনো যোগ্যতাই নেই।’
গয়েশ্বর ডিবিপ্রধান হারুনকে বলেন, ‘আপাতত পুলিশের চাকরি খুবই রিস্কি। প্রভুর কথা না শুনলে চাকরি যায়। এটা থ্যাংকসলেস জব। টাইম আছে, রিজাইন দিয়ে চলে যাও। কারণ আজকে যে ঘটনা করেছ, ওয়াশিংটন ডিসিতে সেই ঘটনা চলে গেছে। তোমাদের ওপর যে খড়গ আসা যাওয়া করছে যদি এটা কার্যকর হয়, তখন তো রিজাইন করারও সময় পাবে না।’
হামলার সময় নেতাকর্মীদের কর্তব্যনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা পার্টির সিদ্ধান্ত ধর্মীয় রীতিনীতির মতো মেনে চলে। আমার চেয়ে বেশি আহত হয়েছে শত শত নেতাকর্মী। কিন্তু তারা হাল ছাড়েনি। কর্মীরা রক্ত দিতে শিখছে। কর্মীরা আমাকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। তখন আমি ভেবেছি, আমি সরলে ওদের মেরে ফেলবে। মরতে হয় একা মরব সেজন্য আমি সরিনি।’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘রাষ্ট্রের এত টাকা হয়নি গয়েশ্বরের মাথা কিনতে, রাষ্ট্রের ক্ষমতা আছে একটা গুলি করে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু সরকারের সেই সামর্থ্য নেই যে গয়েশ্বর রায়ের মতো কাউকে কিনবে। গয়েশ্বরে রায় একা না, হাজার হাজার লাখ লাখ গয়েশ্বর রায় এখন বাংলাদেশে তৈরি হয়ে গেছে। কেউ মাথা বিক্রি করা মানে দেশের স্বাধীনতা বিক্রি করা, এই স্বাধীনতা কেউ বিক্রি করবে না।’
তবে আপ্যায়ন করে সেটার ছবিসহ ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘যারা এ কাজটি করেছে এটি অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচায়ক। একধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক। এতে কি সরকার প্রমাণ করতে চায় যে, আমরা হা-ভাতে? ভিক্ষা করে খাই? গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘খাইয়ে খোটা দেওয়া’। ডিবি অফিসে আমার সঙ্গে যা করা হলো তা ওই রকমই। আমার বাড়িতে তো বিভিন্ন সময় অনেক লোক খায়। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু এই খাবারের ছবি উঠিয়ে কি আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেব? এটা কি আমার জন্য ভালো হবে?’
মন্তব্য করুন