গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জনগণ আর কতদিন অপেক্ষা করবে, এ রকম প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই যে সংস্কার এবং নির্বাচনকে সামনাসামনি করে দেওয়া- এটা আরেকটা অপরাধ, এটা ভুল। আরে ডেমোক্রেসি ইট সেলফ ইজ এ রিফর্ম।
মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা-সাবভৌমত্ব সুরক্ষা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা’- শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের গর্বিত জনগণ আমরা, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছি, যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছি এবং এখনো আমরা গণতন্ত্রের প্রত্যাশায় বসে আছি। সেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলছি, স্লোগান দিচ্ছি, সভা-সমাবেশ করছি। কত দিন? কত বার আমাদের এই কাজ করতে হবে? আমাদের এই বাংলাদেশের জনগণকে বারবার সেই সাপ-লুড়ু খেলার মতো ৯৩ থেকে ৩-এ চলে আসতে হচ্ছে। কেন? আমরা ৯৩ থেকে ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭ কইরা ১০০ তে পৌঁছতে চাই। এই পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করবে আমরা তাদের ওই সাপ খেলা লুডুর সাপ বলে মনে করি।
তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, তারা আমাদের বারবার ফিরিয়ে নিয়ে আসছে। নানা রকমের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টির জন্য। এটা করতে হবে আগে, ওটা করতে হবে আগে, আগে-পরে করার প্রশ্ন তো নেই। যা যা করা দরকার সবই করতে হবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমি যেটা বলতে চাই, ফ্যাসিবাদী সরকারের যারা দোসর ছিল, যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা তাদের সঙ্গে ছিল, তাদের সবার বিচার অবশ্যই করতে হবে। কারণ তারা আমার বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে, আমার বন্ধুর বিরুদ্ধে, আমার সহকর্মীর বিরুদ্ধে, আমার দেশবাসীর বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। অবশ্যই বিচার চাই। কিন্তু সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করা যাবে না- এ প্রশ্ন যারা তোলে, তারা আসলে এই কথা বলে জনপ্রিয় কথার আড়ালে নির্বাচনটাকে বিলম্বিত করতে চায়।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই যে সংস্কার এবং নির্বাচনকে সামনাসামনি করে দেওয়া- এটা আরেকটা অপরাধ, এটা ভুল। আরে ডেমোক্রেসি ইট সেলফ ইজ এ রিফর্ম। এর আগে রাজতন্ত্র ছিল, এর আগে সামন্তবাদ ছিল। গণতন্ত্র যে এসেছে- এটাও তো একটা সংস্কারের মধ্য দিয়ে এসেছে, একটা বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে এসেছে, আর সেই গণতন্ত্র সারা দুনিয়ায় অনেকভাবে কার্যকর। আমেরিকায় যেভাবে গণতন্ত্র কার্যকর হয়, ইংল্যান্ডে সেভাবে হয় না, ফ্রান্সে যেরকম কার্যকর হয়, ভারতে সেভাবে হয় না, নেপালে যেরকম হয়, বাংলাদেশে সেরকম হয় না। একেক দেশে একেকভাবে গণতন্ত্র কার্যকর হয়। কাজেই সংস্কার আর গণতন্ত্র পরস্পরবিরোধী না, এটা পরিপূরক। সেজন্যই আমরা বলি, বিচারও হতে হবে, সংস্কারও হতে হবে, নির্বাচনও হতে হবে এবং সবই যত দ্রুত সম্ভব হতে হবে।
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহসভাপতি এমএ ওহাবের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির ক্বারি আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জাগপার প্রেসিডিয়াম মেম্বার খন্দকার আবিদুর রহমান, আ স ম মিজবাহ উদ্দিন, রকিব উদ্দিন চৌধুরী মুন্না, কেন্দ্রীয় নেতা আওলাদ হোসেন শিল্পী, আনোয়ার হোসেন, রোকন উদ্দিন হাজারী, ঢাকা মহানগরের সভাপতি হোসেন মোবারক, সাধারণ সম্পাদক এমএ শাহীন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের আন্দোলনের পথ ধরে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন ঘটেছে। কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পূর্ণ প্রতিষ্ঠা হয়নি। তাই সরকারকে বলব, গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে নির্বাচন দিন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে।
মন্তব্য করুন