জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার বিচারের দাবি এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ‘জুলাই রেভল্যুশন-২০২৪’ হিসেবে গেজেট নোটিফিকেশন করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। মামলাটিকে চলমান মামলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ সময় আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এভিডেন্স (প্রমাণ) হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞান আহরণ বা গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি কেন সংরক্ষণ করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
মূলত এই রুলের ওপর রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিন ছিল ৩ আগস্ট। তবে রাষ্ট্রপক্ষের সময় চাওয়ায় আজ আদালত রায় দেন।
এর আগে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখা এবং জুলাই–আগস্ট গণহত্যায় দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনার দাবি জানানো হয়। প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দেন, যেখানে জানতে চাওয়া হয়, কেন দেশের নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিচারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গত জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সেপ্টেম্বরে একটি দল পাঠায়। এ দলে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তারা মরণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য অনুসন্ধান পরিচালনা করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, যারা সরাসরি বিক্ষোভ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্র বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা একাধিক বৃহৎ আকারের অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন, যেখানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছিল বা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছিল। এতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল। এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল যেখানে লোকদের বিন্দু-শূন্য পরিসীমা থেকে গুলি করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আবু সাঈদের বিশেষ ঘটনাটি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে দু’বাহু ছড়িয়ে ‘আমাকে গুলি করুন’ বলে চিৎকার করার সময়ের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র এবং ভূ-অবস্থান প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তদন্তকারীরা তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, তা সাক্ষ্যপ্রমাণের জন্য পুনর্নির্মাণ করেন।
একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, তার আঘাতগুলো প্রায় ১৪ মিটার দূরত্ব থেকে ধাতব গুলিবোঝাই শটগান দিয়ে কমপক্ষে দুবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদ, পুলিশের ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।
মন্তব্য করুন