বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বিচিত্র। রাজনীতিকে সঠিক পথে কীভাবে ফিরিয়ে আনতে হলে নৈতিক দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর খামার বাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’। বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, যে তরুণরা বৃদ্ধের মতো কথা বলে তারা তরুণ নয়। কেননা, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে তারুণ্যের যে শক্তি দেখি, যারা রাজপথে রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। আমরা সেই তরুণদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আজকে কোথায়? তরুণেরা কী করছে? ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ কিন্তু আজকের বাংলাদেশের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। এসব এখন কঠিন মনে হবে। আমি বিশ্বাস করি তরুণদের সমন্বয়েই দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা তারুণ্যের জয়গান গাইব। যেসব তরুণ সঠিক পথে আছে তাদের আমি শ্রদ্ধা করি।
তিনি বলেন, আন্দোলনরত তরুণেরা নাকি সাধারণ ছাত্র ছিল। তবে সেখানে কি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছিল না? নুরুর (ভিপি নুর) দলের নেতাকর্মী বা ছাত্ররা ছিল না? বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে কি না জানি না। তবে সেদিন কিন্তু বাংলাদেশের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজকে সেই যাত্রা ৯ মাসে নষ্ট হবে, বা উল্টোপথে যাবে সেটি কিন্তু দেশের মানুষ হতে দিবে না। আজকে যে অস্থিরতা সেটি নিরসনে আমাদেরকে সঠিক পথে যেতে হবে যাতে অস্থিরতা থেকে বের হতে পারি। সেই দায়িত্ব তরুণদের নিতে হবে।
ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরীক্ষায় এখনও উত্তীর্ণ হতে পারিনি। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতি বিচিত্র। রাজনীতিকে সঠিক পথে কীভাবে ফিরিয়ে আনতে হবে সেটি হলো নৈতিক দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। ফাঁকি দিয়ে ঠকিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। যা আমরা গত ১৫ বছরে দেখেছি। সংসদকে একটি নাট্যশালায় পরিণত করেছিল। আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র কিন্তু কাজে বলে স্বৈরতন্ত্র। অর্থাৎ মুখে শেখ ফরিদ কিন্তু আওয়ামী লীগের বগলে ইট। এভাবে রাজনীতি হয় না। সেটি কিন্তু তরুণরাই পরিবর্তন করবে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে হওয়া উচিত। দাবির বিষয় নয়। কারণ প্রকৃতির নিয়মে আমরা চলে যাবো। এখানে তরুণদের কোটার জন্য কিছু নেই। আমরা পরিবর্তন চাই। কিন্তু মনে হচ্ছে যে ট্র্যাপে পড়ে যাচ্ছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিনের সঞ্চালনায় এসময় আরো বক্তব্য দেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ডা. জাহেদ উর রহমান, গবেষক ও বিশ্লেষক মেজর (অব.) রেজাউল করিম, দ্য ডিসেন্ট সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চিকিৎসক ডা. আব্দুন নূর তুষার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবাশ্বার হাসান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।
ফটোগ্রাফার শহীদুল আলম বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অপ্রতুল। চব্বিশের আন্দোলন চলাকালে আমি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি সেসময় নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। এরপর তিনি দেশে তার দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার করছেন। আমরা আশা করি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইকে সজাগ হতে হবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, অতীতে যারা দেশের মানুষের অধিকারকে পদদলিত করেছে। অধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদেরকে আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। কোনো বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির খবরদারি মেনে নেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন