বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি, কারোর পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু পদত্যাগের নাটক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য অতি অবশ্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি এবং এখনো চাই। এমন অবস্থায় গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে এখন যদি বাংলাদেশের মানুষকে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়, সেটা হবে ইতিহাসের একটা দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়।
বুধবার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য কথা বলি; সেটা যদি অপরাধ হয়, সেই অপরাধ আমরা বারংবার করতে থাকব। আমরা আশা করি, এই সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, আদালতের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে ইশরাক হোসেনের শপথ পাঠ করাবে এবং নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করবে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে এ দেশের শহীদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা এমন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে চাই, যেই রাষ্ট্রে তরুণরাই হবে মূল চালিকাশক্তি।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা লক্ষ করছি। অত্যন্ত সুকৌশলে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। আমরা ভুলতে বসেছি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা; ফ্যাসিবাদী আমলের লুটপাট-দুর্নীতির কথা, গুম-খুন, অপহরণের কথা। আমরা রক্ত দিয়েছি, এ দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, আদালতের রায়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করার জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আইনের শাসন পুনরায় হুমকির মুখে, আদালতের রায় কার্যকর করা হয় না। সেই পরিস্থিতিতে আমরা আহ্বান জানাব, আমরা যেন সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকি, গণতন্ত্রের পক্ষে গণতন্ত্রকামী সকল শক্তির মধ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য তৈরি করি- যাতে বাংলাদেশের সামনে আর কোনোদিন আবার নব্য স্বৈরাচারের উত্থান না হয়, ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি না হয়। আমরা সেই রকম একটা সংবিধান, সেই রকম একটা রাষ্ট্র কাঠামো চাই, সেই রকম রাষ্ট্র সংস্কার করতে চাই- যে রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনোদিন স্বৈরাচারের উদ্ভব হবে না কিংবা স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের উৎপত্তির কোনো প্রজননস্থল হবে না।
তিনি বলেন, এই দেশে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের সময় ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি যে লুটপাট করেছিল, তার চেয়েও বহুগুণ লুটপাট করেছে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি। তারা বিগত ১৫-১৬ বছরে প্রতি বছর ২ লাখ কোটি টাকা করে মোট প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা এ দেশের জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। তারা ৪ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রেখে গেছে। মেগা প্রকল্পের নামে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা মেগা দুর্নীতি করেছে এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা। তারা বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় যেভাবে ব্যাংকিং খাতে ঋণ দিয়েছে, সেই ঋণ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেত। এসব তথ্য শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আজকে আওয়ামী দুর্নীতির ইতিহাস মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তিসমূহ যেন একতাবদ্ধ হয়ে আমাদের একমাত্র শত্রু, রাজনীতির শক্র, এই দেশের গণশত্রু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে চিরতরে প্রতিহত করি; এটাই আমাদের শপথ হোক।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোনোদিন গণতন্ত্র বোঝেনি। গণতন্ত্র তারা বিলুপ্ত করেছে, তারা স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞের রাজনীতি করেছে- কখনো রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে, কখনো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে, আবার কখনো ছাত্রলীগ-যুবলীগের মাধ্যমে।
বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, আমরা যারা গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করেছি, আমরা যারা তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করেছি, তারা আজকে নাকি কোনো কোনো দেশের এজেন্ট হয়ে গেছি। এইসব বয়ান তারাই করছে, যারা আমাদের বক্তব্যে মনে করে যে- আমরা এ দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছি, যারা মনে করে- আমরা এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার পক্ষে কথা বলছি, এরা তারা। আমরা বুঝি, এই দেশে পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি এদের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করার জন্য আবার নতুন করে পাঁয়তারা করছে।
মন্তব্য করুন