গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর অভিযোগ করে বলেছেন, জং ধরা অস্ত্র দিয়ে পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজাচ্ছে। গত কয়েক দিন আগে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে আটকের পর পুলিশ এই নাটক সাজিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বর্তমান সংকটে যুবসমাজের করণীয়’- শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তিনি।
নুর বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তিকেও এই সরকার বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। তাকে সরকারদলীয় নেতারা বিভিন্নভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। অথচ ড. ইউনূস সারা বিশ্বে পরিচিত একজন ব্যক্তি, যিনি সারা বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন।
গণঅধিকার পরিষদের এই সভাপতি বলেন, আজকে সুনামগঞ্জে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা শেষে সেখানকার প্রেস ক্লাবে খাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ সময় অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। তখন সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে কল করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। একইসঙ্গে তিনি (এসপি) এটাও বলেন, এসব আলোচনা সভা করতে হলে নাকি পুলিশের অনুমতি লাগে। একটা স্বাধীন দেশে সভা-সমাবেশ করা সাংবিধানিক অধিকার। সেটা করতেও কেন পুলিশের অনুমতি লাগবে?
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে বিরোধীদলের সভা-সমাবেশে হাতেগোনা কয়েকজন অতিউৎসাহী পুলিশ অফিসার হামলা করে। এদের পরিচয় এরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে নুর বলেন, যারা সরকারের নির্দেশে এসব করছেন তাদের মনে রাখা উচিত- এই সরকার কিন্তু সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবে না। আপনারা যখন ভিসা নীতির আওতায় পড়বেন, তখন আপনাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে? আন্দোলনের সঠিক সময়ে সঠিক নির্দেশনা আসবে। তাই সবাইকে তৈরি থাকতে হবে। ঘোষণা আসা মাত্রই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন একা হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল আর এই গুম-খুনের সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে না। তাই পেশির জোরে ক্ষমতায় থাকতে তারা বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে। কিন্তু তারা আর ‘১৪ ও ‘১৮ মার্কা নির্বাচন করতে পারবে না। আমেরিকা-ইউরোপ বাংলাদেশে বড় দলগুলোর অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। ১৬০ জন বিশ্বনেতা নির্বাচনকালীন প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষ হয়, সে বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। ড. ইউনূসকে নিয়ে সরকার যে নাটক করছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বহির্বিশ্ব থেকে সরকারের গুম-খুনের প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এই সরকার দেশ-বিদেশ ঘুরে কোথাও একটু সমর্থন পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ আজ সমগ্র বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, বড্ড একা হয়ে গেছে। এইবার জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই এদের পতন ঘটবে।
রাশেদ বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে, তারা আবারও ক্ষমতায় এসে বাকশাল কায়েম করবে। দেশে ভিন্নমতের মানুষকে শেষ করে দিবে। সুতরাং এই লড়াই আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই, এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগের পতন ঘটাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ বলেন, এখন সময় যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। এ সময় তিনি যুব ঐক্যের আহ্বান করেন।
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সম্পাদক নাদিম হাসানের সঞ্চালনায় এতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম, ছাত্রঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমানসহ এবি যুব পার্টি, যুব জাগপা, ইসলামী যুব মজলিশ, যুব জাতীয় পরিষদের নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা শেষে কেক কেটে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
মন্তব্য করুন