দেশের প্রচলিত আইন ও নিয়ম মেনে কেউ রাজনীতি করলে, তা নিয়ে বিএনপির আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আইন অনুযায়ী যার অধিকার আছে, সে রাজনীতি করতেই পারে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব বিবিসি বাংলার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়েছে। যেখানে আগামী দিনের রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির অতীত রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে দলের ভেতরেই যেসব আলোচনা হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, যারা ১৯৭১ সালে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছে, তার দায় তাদেরই নিতে হবে। আমি আমার দায়িত্বের জবাব দিতে পারি, অন্য কারও পক্ষে নয়।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের আগে যারা গুম, খুন, লুটপাটে যুক্ত ছিল, তাদের জবাবদিহি করতে হবে—তেমনি অতীতের অন্য রাজনৈতিক দলেরও নিজেদের কাজের জবাব দিতে হবে।
নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে জনগণের সঙ্গে জনগণের মাঝেই থাকব ইনশাআল্লাহ।
জুলাই আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমাকে কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সবার কাছে গৃহীত এ আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটি প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে বহু বছর আগে থেকে।
তারেক রহমান আরও বলেন, এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসের আন্দোলনে জনগণ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে। সেদিন শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই মাঠে ছিল না। আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসাছাত্ররা ছিলেন আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিণীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। কৃষক, শ্রমিক, সিএনজিচালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে শুরু করে গার্মেন্টস কর্মীরাও নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অনেক সাংবাদিক—যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। ফলে কারও ভূমিকাকেই আমরা ছোট করে দেখতে চাই না। সমাজের দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের অবদান আছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল বা কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
মন্তব্য করুন