

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের মাঠ সমতল করতে ডিসি-এসপিসহ সকল পর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে একটি বিশেষ দলের প্রতি আনুগত্যশীল লোক নিয়োগ করা হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।’
রোববার (১৬ নভেম্বর) বেলা ১১টায় মগবাজার আল ফালাহ মিলনায়তনে আন্দোলনরত ৮ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সরকারের কিছু পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে, তারা একটি বিশেষ দলকে খুশি করার চেষ্টা করছেন। যা নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে। সরকার যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, তাহলে ৮ দল তাদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন এবং জুলাই জাতীয় সনদের সংস্কার বাস্তবায়ন জরুরি।’
চলমান আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে জামায়াতসহ ৮ দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করে ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। এই ৫-দফা দাবির বাস্তবায়নে ৮ দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে জাতির প্রত্যাশা ছিল উচ্চে। কিন্তু আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণভোট আয়োজনের যে দাবি জানিয়েছিলাম, তা উপেক্ষিত হয়েছে। একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটি দলের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার তাদের দিকে ঝুঁকেছে-এমন ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে। ফলে সংকটের সমাধান না হয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।’
দেশের মানুষ ‘হ্যাঁ’ ভোট ও সংস্কারের পক্ষে, আর যারা ‘না’ ভোটের প্রচারণা করছে তারা সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ এবং দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা জাতির সামনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম (পীরসাহেব, চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাড. আনোয়ারুল হক চান এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মুসাদ্দিক বিল্লাহ মাদানী ও মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়ির নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মাদ মুনতাসির আলী ও অধ্যাপক আবদুল জলিল, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির অর্থসচিব মাওলানা আনোয়ারুল কবির, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. রুকনুজ্জামান (রতন) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন