

বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অস্বাভাবিক দ্রুততায় চট্টগ্রামের লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁওতে কনটেইনার টার্মিনাল চুক্তি করায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
তিনি বলেছেন, শর্ত গোপন রেখে এবং জনগণের নানা অংশের মতামত উপেক্ষা করে যেভাবে এই চুক্তি করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই চুক্তি সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে সাইফুল হক এসব কথা বলেন। জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি টার্মিনাল চুক্তি বাতিল এবং নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
সাইফুল হক বলেন, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যেভাবে একটি ৩০ বছর এবং আরেকটি ২২ বছর পরিচালনার জন্য দুটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে লিজ দেওয়া হয়েছে, দেশপ্রেমিক কোনো সরকার এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে না। অন্তর্বর্তী চরিত্রের একটি সরকারের টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার জন্য কেন এই তাড়াহুড়া, তাও পরিষ্কার নয়।
তিনি বলেন, বিদেশিদের হাতে কনটেইনার টার্মিনাল পোর্ট নির্মাণ এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন যুক্ত রয়েছে। রাজনৈতিক সমঝোতা ও বোঝাপড়া ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অতীতে সরকার জাতীয় জনমতকে উপেক্ষা করে ও জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নানা চুক্তি করায় জনরোষের শিকার হয়েছিল। ভারতীয় আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অসম ও অন্যায় চুক্তির খেসারত এখনো বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে। বিস্ময়করভাবে অন্তর্বর্তী সরকারও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পথে হাঁটছে।
তিনি আরও বলেন, কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে জি-টু-জি পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ব্যতিরেকে যেভাবে এই চুক্তি করা হয়েছে, তাতে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যে সরকারের বয়স আর তিন মাস, সেই সরকারকে কেন প্রবল বিরোধিতা আর বিতর্কের মধ্যে এই চুক্তি করতে হবে- তার যুক্তিসঙ্গত কোনো ব্যাখ্যা নেই।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক অনতিবিলম্বে সরকারকে বিদেশিদের দিয়ে ও তাদের পরিচালনায় টার্মিনাল সংক্রান্ত চুক্তি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে অতীতে স্বাক্ষরিত ‘দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী’ এই ধরনের চুক্তির পর্যালোচনা ছাড়া নতুন কোনো চুক্তি না করার দাবিও জানান। তিনি এই চুক্তি বাতিল করে নিজেদের জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগ দিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান বলেন, সরকারকে যা খুশি তাই করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন এই চুক্তি বাতিলে অচিরেই বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা পার্ট ইসলাম, এমডি ফিরোজ, কেন্দ্রীয় সংগঠক বাবর চৌধুরী, যুবরান আলী জুয়েল প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কনটেইনার টার্মিনাল চুক্তি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে পার্টির নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল তোপখানা রোড, বিজয়নগর ও সেগুনবাগিচা প্রদক্ষিণ করে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
মন্তব্য করুন