

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসন থেকে এমপি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএএইচ সেলিম (সিলভার সেলিম)।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করা জনপ্রিয় এ বিএনপি নেতা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। ইতোমধ্যে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন।
জানা গেছে, বাগেরহাটের কোনো আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। প্রায় দুই দশক পর সিলভার সেলিম রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণায় বাগেরহাটে তাকে ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বাগেরহাটে রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন মেরুকরণ। রাজনীতিতে তার প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সম্প্রতি নিজ এলাকা বাগেরহাটে তার আগমন উপলক্ষে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় ছিল জনতার উপচেপড়া ভিড়। এ বিশাল জনসমাগম স্থানীয় রাজনীতিতে তার জনভিত্তি এবং গ্রহণযোগ্যতার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
স্থানীয় সাধারণ কর্মী ও সমর্থকরা মনে করছেন, বাগেরহাটের রাজনীতিতে যে দীর্ঘ নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সিলভার সেলিমের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটতে চলেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৃণমূলের কয়েজন কর্মী বলেন, আমরা এতদিন একজন পরীক্ষিত ও শক্ত নেতার অভাব অনুভব করছিলাম। সেলিম ভাই ফিরে আসায় আমাদের মাঝে নতুন করে উদ্দীপনা এসেছে। আমরা আশা করছি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তিনিই দলের নেতৃত্ব দেবেন।
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী নেতা সিলভার সেলিম কালবেলাকে বলেন, আমি সংসদ সদস্য থাকাকালে বাগেরহাটে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। শহররক্ষা বাঁধ, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির-গির্জা, রাস্তাঘাট তৈরি করেছি। কিন্তু এরপরে আর বাগেরহাটে তেমন উন্নয়ন হয়নি। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পতনের পর বাগেরহাটের সাধারণ মানুষ ফের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছেন। তারা মনে করছেন— আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, এলাকার উন্নয়ন হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই বাগেরহাটের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার চাপের কারণে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি— এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করে বিএনপির হাইকমান্ড আমাকে মনোনয়ন দেবে। আর মনোনয়ন না পেলেও আমি নির্বাচন করব।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাগেরহাট-২ আসনকে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাগেরহাটের জনগণের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা অপরিসীম। আমি আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলে শিল্পায়ন, তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নে মনোনিবেশ করতে চাই।
রাজনীতিকে আমি শুধু জনগণের সেবা করার মাধ্যম হিসেবে দেখি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় অবকাঠামো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য একটি সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক রূপরেখা প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সিলভার লাইন গ্রুপের কর্ণধার বাগেরহাট সদর উপজেলার মুক্ষাইট গ্রামের বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএএইচ সেলিম ৯০ দশকের শেষ দিকে বাগেরহাটের রাজনীতিতে আসেন এবং জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই প্রভাবশালী নেতা শেখ হেলাল উদ্দিনকে হারিয়ে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
সংসদ সদস্য থাকাকালীন মুন্সীগঞ্জ সেতু, শহররক্ষা বাঁধ, মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি কলেজ, বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন তিনি। বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।
মন্তব্য করুন