বিএনপির নেতাকর্মীদের কারণে বিদেশিরা এদেশে নাক গলানোর সুযোগ পায় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সঙ্গে যেন বিদেশিদের সুসম্পর্ক নষ্ট হয় তার জন্য অনেক অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি এবং তার কিছু মিত্র আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কাছে বলে আসছে। তারা বিদেশিদের কাছে গিয়ে বারবার বাংলাদেশকে ছোট করেছে। এর ফলে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা নাক গলানোর সুযোগ পেয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে টেকসই অর্থের জন্য পুঁজিবাজারের গুরুত্ব, দেশের অর্থনীতিতে ক্যাপিটাল মার্কেট ও মানি মার্কেটের ভূমিকা ও আগামী দিনে দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে আয়োজিত এক শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুস্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমরা এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে যেমন দিল্লির সুসম্পর্ক, তেমনি ওয়াশিংটনেও সুসম্পর্ক। কিন্তু বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি বিদেশিদের দিয়ে এই দেশের ওপর নাক গলানোর জন্য অপচেষ্টা চালিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, সবার সাথে সুসম্পর্ক; কারো সাথে শত্রুতা নয়।
আসন্ন নির্বাচনে কারা মনোনয়ন পাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচনে বিশ্বাসী সেহেতু আমরা বহু আগ থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের দলের একটা নিজস্ব মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে এবং নিজস্ব জরিপ টিম রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ের তা যাচাইবাছাই করেন। যেই জায়গায় যেই প্রার্থী জনপ্রিয় তাকেই সেই জায়গাতেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি দলের কত বড় নেতা, তিনি সরকারের কত বড় মন্ত্রী তা বিবেচনা করা হবে না। শুধু বিবেচনা করা হবে তার কত জনপ্রিয়তা।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের বিশাল অবদান রয়েছে উল্লেখ করে সেমিনারে তিনি বলেন, অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের ভূমিকা অগ্রগণ্য এবং এই দুটি যদি একসাথে কাজ করে তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমাদের দেশে মানি মার্কেটের অনেক গ্রোথ হয়েছে ; এটা কখনোই হতো না যদি না বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ভালো না হতো এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকে যদি আমরা তাকাই সেখানেও অনেক ভালো গ্রোথ হয়েছে।
দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে; প্রতিটি মানুষের যে ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে তা আমরা যারা এই উন্নয়নের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি তারা অনুভব করতে পারি না। আজ থেকে পনের বছর আগে যে মানুষটি বিদেশে গেছেন সে এখন দেশে এসে আর এই দেশকে চিনতে পারে না। সে যখন গ্রামে যায় তখন তার গ্রামকে চিনতে পারে না। সে দেখে আগের কুঁড়েঘরগুলো আর নাই হারিয়ে গেছে গেছে। সবগুলোই টিনের চালা, আধা পাকা ও পাকা বাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। গ্রামের যে মেঠোপথ সেখানে পিচ ঢালা পথ তৈরি হয়েছে। তখন সে বুঝতে পারে দেশটা কোথায় গেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি গার্মেন্ট সেক্টরে ২২ শতাংশ শ্রমিক সংকট, কৃষিখাতে ধান কাটার লোক নাই এবং যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে সামনে আমাদের কর্মদক্ষ লোকের অভাব হবে। সুতরাং আমাদের বিনিয়োগে মনোযোগী হতে হবে এবং এই বিনিয়োগ এমন ভাবে করতে হবে যাতে আমরা ফেইল না করি। মানি ও ক্যাপিটাল মার্কেটকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং সেটার জন্য আমাদের দেশীয় বিনিয়োগ হয়ত সাড়ে ৪০০ বিলিয়নের মতো সম্ভব হবে; বাকিটা বাইরে থেকে আনতে হবে। এই দুইটার জন্য এখন আমাদের দেশি-বিদেমি বিনিয়োগ দরকার। এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ ফ্রেন্ডলি ডেভেলপ করা দরকার এবং বাংলাদেশ গত কয়েক বছর আমাদের সকল ব্যবসা বাণিজ্য অনেক ভালো করছে কিছু সময় আপস এন্ড ডাউন থাকে। এই মেসেজগুলো আমাদের বিদেশিদেরা যদি পায় এবং সামনের দিনগুলোতে যেখানে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে- এই জিনিসগুলো আমরা এই ইনভেস্ট উইকের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই।
সেমিনারে ‘টেকসই অর্থের জন্য পুঁজিবাজার’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. রিয়াদ মতিন। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ইসতার মহল, শান্তা ইক্যুইটি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, ঢাবি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।
মন্তব্য করুন