‘সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন হুমকির জন্য তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উন্নয়ন করে দেশকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি, বেশি বললে আগের জায়গায় নিয়ে সবকিছু বন্ধ করে দিব’- এ ধরনের বক্তব্য একজন প্রধানমন্ত্রী কী করে দিতে পারেন। তিনি কী তার বাবার টাকায় দেশ উন্নয়ন করেছেন? নাকি এদেশের জনগণের টাকা, মেহনতি মানুষের শ্রম ও ঘামের টাকায় করেছেন। এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশময় আন্দোলন গড়ে উঠলে তার জন্য সুখকর হবে না।
চরমোনাই পীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলে থাকেন, দেশের এত উন্নয়ন করলাম, এত উন্নয়ন করার পরও কেনো আত্মবিশ্বাস হয়নি, জনগণ ভোট দিবে, তাহলে কিসের উন্নয়ন করলেন? বিদেশে বেগমপাড়া কারা বানিয়েছে? ১৫ বছরে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত কারা করেছেন, কিসের উন্নয়ন করলেন? ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা করছিল আওয়ামী লীগ। ১৭৪ দিন হরতাল অবরোধ করে দেশকে পঙ্গু করে দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য। এখন তত্ত্বাবধায়ক চিনেন না? এই ধোঁকাবাজি ছাড়েন, অন্যথায় দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমতা গ্রহণ করবে না। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে দেউলিয়া কারা করেছে? সমাবেশে ২০ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র-যুবসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের কল্যাণে ২৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন চরমোনাই পীর।
আজ শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সভাপতি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মোস্তফা কামাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা বিভাগ সৈয়দ ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম, ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা নেছার উদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহমান, সহসভাপতি হাফেজ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ প্রমুখ।
মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি মুজিব কন্যা বলছি, আমার ওপর আস্থা রাখুন, আমরা আস্থা রেখে নির্বাচনে গিয়েছিলাম, কিন্তু আপনি দিনের ভোট রাতে নিয়ে চরম ধোঁকাবাজি করেছেন।
তিনি বলেন, জাতি আর ধোঁকায় পা দিবে না। জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া বিদ্যমান সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে না। প্রয়োজনে শ্রমিক জনতা রাজপথে ঘাম ও রক্ত ঝড়াতে প্রস্তুত রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাকাত দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনে মুসলমান মা, বোন ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল আকসা ধ্বংস কাজ করছে। তিনি বিশ্বের মুসলিম নেতাদের মজলুম ইসরাইলের পাশে দাঁড়নোর আহ্বান জানান।
সমাবেশে ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক শাহ মুহা. আবু জাফর, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, এ এম ফয়েজ হোসাইন, প্রধান সমন্বয়ক সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন। মোশারফ হোসেন মন্টু সাধারণ সম্পাদক জাতীয় সমাজতান্ত্রীক শ্রমিক জোট, আব্দুর রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ গণঅধিকার শ্রমিক পরিষদ, বাচ্চু ভুঞা, সমন্বয়ক, সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ, প্রভাষক আব্দুল করিম। সভাপতি, ইসলামী শ্রমিক মজলিস, শাহ আলম হুসাইন, সমন্বয়ক, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন।
ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের ২৫ দফা ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে উঁকি দিল বিজয়ের সূর্য। শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আশার সঞ্চার হলো, এই বুঝি সব ধরনের নিপীড়িন ও বৈষম্য দূর হলো, সব শ্রেণিপেশার মানুষ নাগরিক হিসেবে সম ও ন্যায্য অধিকার পেল। না! আশায় গুড়ে বালি। স্বাধীনতার পর যেন এ এক নতুন বৈষম্য! নতুন নিপীড়ন! শুরু হলো। সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হতে শুরু করল দেশের শ্রমিক সমাজ; যাদের হাত ধরে সচ্ছল ও শক্তিশালী হয় দেশের অর্থনীতি। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, শ্রম কিনাঙ্ক কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি তলে/ ত্রস্ত ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুল-ফলে। কবির ভাষায় সভ্যতা বিনির্মাণে শ্রমিকদের অসমান্য অবদান থাকলেও, মৌলিক অধিকার থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত এ দেশের শ্রমিক সমাজ। এমতাবস্থায় শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজকের এই শ্রমিক সমাবেশ থেকে আমরা ২৫ দফা দাবি প্রস্তাব করছি।
মন্তব্য করুন