প্রগতিশীল শক্তির ঐক্য নষ্ট ও বিভক্তির কারণে দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিনিয়োগে নষ্ট হয়েছে উদার ধর্মবাদ। ধর্মের নামে নানা গুজব ছড়াচ্ছে কওমি মাদ্রাসা ও হেফাজতিরা। তেমনি দেশজুড়ে চলছে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ব্যাংক লোটপাট সহ নৈরাজ্য। গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের গায়ে লেপে দেয়া হয়েছে ধর্মের কালিমা। সব মিলিয়ে সমাজ সুরক্ষার সকল স্তর আজ ধ্বংসের মুখে। এই পরিস্থিতিতে আবারো উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটলে বিপন্ন হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। প্রগতিশীল মানুষগুলোতে নির্বিচারে হত্যায় মেতে ওঠবে অপশক্তি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের তরুণ সমাজের নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টনরা।
‘মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে তারা এই তাগিদ দেন। শনিবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ১৪ দলের অন্যতম শরিক গণতন্ত্রী পার্টি। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশিল সমাজের প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সেমিনারে ঐক্য ও ত্যাগের শক্তি আজকের দিনে খুবই জরুরী উল্লেখ করে মূল প্রবন্ধে পার্টির নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে পালাইনি, এখনও নয়। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চাই। কোন অবস্থাতেই পরাজিত হবো না, সৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষের বাংলাদেশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, সৎ, দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল মানুষের ঐক্য না হলে দুর্নীতিবাজরা কাউকে রেহাই দেবে না।
গণতান্ত্রিক ধারায় অনেক ভুল ভ্রান্তি রয়েছে এগুলো সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৪ দল অসাম্প্রদায়িক ও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকায় আগের মতো নেই। নির্বাচন নিয়ে আমেরিকাসহ বিভিন্ন বিদেশী শক্তি মেতে ওঠেছে। আমেরিকা নিজেদের নির্বাচন নিয়ে হিমশিম খেলেও, আমাদের নির্বাচন নিয়ে দেশটির ভূমিকায় মনে হচ্ছে তারা মানবতা ও গণতন্ত্রের ধারক বাহক সহ পুতপবিত্র। অবস্থা এমন যে, সামনের দিনে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে পারব কিনা জানি না।
তিনি বলেন, দেশজুড়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থপাচার, ব্যাংক লোটপাট সহ সামাজিক নানা অপরাধ ‘ঐক্যবোধ’ নষ্ট করেছে। আমরা এখন চরম বৈষ্যমের পথে। মূল্যস্ফীতি পরিপূর্ণ অসহায় করে তুলেছে সবাইকে।
এ অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কারণে উদার ধর্মবাদ নষ্ট হয়েছে মন্তব্য করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রগতিশীল শক্তির ঐক্য নষ্ট ও বিভক্তির কারণে জামায়াত-বিএনপি ও হেফাজত মিলে গণতান্ত্রিক শক্তিকে দুর্বল করেছে। তারা রাস্তায় খতম করার শ্লোগান দিয়ে মিছিল করলে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর জবাব দিতে পারি না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ ও জাতীয় ক্রান্তিলগ্ন চলছে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ডান শক্তি উত্থানের কারণ হলো বাম শক্তির দুর্বলতা। ক্ষমতার জন্য নির্বাচন নয়, উন্নয়নের সঙ্গে নৈতিক শক্তি যোগ না হলে অগ্রগতি স্থায়িত্ব হয় না বলেও মনে করেন প্রবীণ এই্ রাজনীতিক।
তিনি বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি, পাশবিকতাও অনিয়ম সহ সকল নৈরাজ্য রোধে ১৯৭১ সালের মতো ঐক্য দরকার। আর এই নবজাগণের প্রধান সৈনিক হতে হবে তরুণদের। সামাজিক ব্যধি থেকে আমাদের মুক্তির কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, চলতি বছর বিশ্বের ৩৮টি দেশে নির্বাচন হলেও ভূ রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো আমাদের নির্বাচন নিয়ে ভাবে। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক দিক বলেও মনে করেন তিনি।
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ২৮ অক্টোবর দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে এমন মন্তব্য করে সম্মিলিত ইসলামি জোটের সভাপতি জিয়াউল হাসান বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীতা ক্ষমতায় আসলে আমাদের ঘরে থাকতে দেবে না। তারা সবাইকে হত্যা করবে। তাই অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদের উৎস মাদরাসাগুলোতে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় না। গত ১৫ বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি সার্কুলার পর্যন্ত দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য উগ্রবাদের চর্চা বাড়ছে।
অনুষ্ঠানে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যরিস্টার আরশ আলী, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. জহুরুল, সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন