কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ০৪:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিরাপত্তাহীনতার কারণে হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে : গয়েশ্বর

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্রমান্বয়ে দেশ ছাড়ছেন।

শুক্রবার (২৩ জুন) সকালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা সব ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশার মানুষ একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিলাম পাকিস্তানিদের অত্যাচার-নির্যাতন-শোষণ-বর্ণ বৈষম্য-ধর্মীয় বৈষম্যের হাত থেকে রেহাই পেতে। কিন্তু আমরা দেখলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় ক্রমান্বয়ে দেশ ছাড়ছে। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গায় মানুষ দলে দলে দেশত্যাগ করেছে; কিন্তু এখন তেমন নয়। তবে প্রতিদিনই কমবেশি দেশত্যাগ করছে, সেটা হয়তো আমরা অনুমান করতে পারছি না। যখন পরিসংখ্যান আসে, তাতে দেখা যায় ক্রমান্বয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমছে। যেখানে ষাটের দশকে বাংলাদেশে ৩৭ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায় বসবাস করত, সেখানে এখন ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এর কারণ তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা নেই। তাদের যে নাগরিক অধিকার সংবিধানে আছে, সেটা থেকে তারা বঞ্চিত। প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করলে তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অভিযোগগুলো খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, তদারকি করে না বরং এড়িয়ে চলে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা আদালত বলেন আর প্রশাসন বলেন, কোথাও তারা গুরুত্ব পায় না। এককথায় বলা যায়, বাংলাদেশে তারা পাত্তা পায় না। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে আমাদের দেশের হিন্দুরা সেকেন্ড হোম হিসেবে বেছে নেয়। ‘একটা পূর্ব ঠিকানা থাকা দরকার, এখানে থাকা যাবে না’—এই যে মনোবৃত্তিটা কেন সৃষ্টি হলো? সৃষ্টি হলো এই কারণে যে, রাষ্ট্র সবার নিরাপত্তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ হলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য শুধু যথার্থই নয়, বাস্তবে নির্যাতনের মাত্রা আরও ভয়াবহ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বরাবর ছয়জন কংগ্রেসম্যান একটি চিঠি দিয়েছেন। যাতে বর্তমান সরকারের অস্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ন করা, ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের বিষয় উপস্থাপন হয়েছে। বর্তমান সরকারের গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি যদিও প্রকৃত বিচারে এর চেয়েও অনেক বেশি। তবুও কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে এর আংশিক চিত্র ফুটে উঠেছে। এ জন্য ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, মন্দির ভাঙচুর; ২০১৪ সালে যশোরের অভয়নগরে শত শত বাড়ি, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হামলা, লুটপাট; ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলা, ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর রংপুরের গঙ্গাচড়ায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, সুনামগঞ্জের শাল্লাসহ বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়, এসব হামলার ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা, এমনকি সরকারি মদদপুষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও জড়িত থাকার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ওইসব ঘটনার কোনোটির বিচার তো দূরের কথা, সুষ্ঠু তদন্ত পর্যন্ত হয়নি। উপরন্তু আমরা দেখেছি যে, ওইসব হামলার ঘটনাগুলোকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফয়দা লোটার চেষ্টা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ছয়জন কংগ্রেসম্যানের চিঠির বিষয়টি আড়াল করতে ক্ষমতাসীনদের চেষ্টার নিন্দা জানিয়ে বিজন কান্তি সরকার বলেন, সরকার ও তার পদলেহি কতিপয় ব্যক্তিবর্গ এটিকে মিথ্যা বলে প্রচার করে নিজেদের অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা প্রকারান্তরে চলমান ফ্যাসিবাদকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে’র পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের উপদেষ্টা নিতাই রায় চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অপর্ণা রায় দাস, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, রণজিত রায়, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদেশি এয়ারগানসহ ৪০৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

২৪ নভেম্বর : আজকের রাশিফলে কী আছে জেনে নিন

কাকে শাস্তি দিতে চান হুমা কুরেশী?

ঢাকা ছাড়লেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

যুবদল নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

জবি শিক্ষার্থীদের বাস সেবা দিতে চায় শিবির, অনুমতি দেয়নি কমিশন

ইউক্রেন শান্তি চুক্তি আলোচনায় বড় অগ্রগতি

এসএসসি পাসে মীনা বাজারে চাকরির সুযোগ

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা

পুরুষদের প্রস্টেট চেক করানো কেন জরুরি

১০

১০৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৫২ জনের গণশুনানি

১১

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, দ্বিতীয় ঢাকা

১২

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়া ছাড়া উপায় নেই : ইরান

১৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, টেঁটাবিদ্ধে বৃদ্ধ নিহত

১৪

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৫

হুমকির মুখে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জাতীয় গ্রিড লাইন

১৬

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার পদত্যাগ

১৭

আজ ঢাকার আবহাওয়া যেমন থাকতে পারে

১৮

আড়ং ডেইরিতে নিয়োগ, দ্রুত আবেদন করুন

১৯

২৪ নভেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

২০
X