গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেছেন, সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। এ লক্ষ্যে একতরফাভাবে তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। আসলে তারা পুরো বাংলাদেশটাকে নিয়ে একটা খাদের দিকে এগুচ্ছে। তারা আমাদেরকে খাদের মধ্যে ফেলতে চায়, আমাদের দেশটাকে ধবংস করতে চায়। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশ নিয়ে বাজি ধরে যা ইচ্ছা তাই আজকে করছে। তবে দেশ ও দেশের মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলে তারা আর এই কৌশল করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। সেই লড়াই আসছে।
আগামী দিনে অবরোধ-বিক্ষোভ-ঘেরাও নানা রকম কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে আরো বড় কর্মসূচির দিকে নিয়ে যাবো এবং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য করব।
দেশব্যাপী ৪৮ ঘন্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিলপরবর্তী এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় হরতালের সমর্থনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা বিজয়নগর থেকে মিছিল বের করেন। এরপর মিছিলটি পুরাতন রাজস্ব বোর্ড ভবন ও শিল্পকলা একাডেমি সড়ক দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইউসুফ সেলিমের সভাপতিত্বে এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জেএসডির সিরাজ মিয়া, নাগরিক ঐক্যের মুফাখখারুল ইসলাম নবাব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারকে বলি, এখনো সময় আছে। আপনারা কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নেবেন, নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে গঠিত হতে পারে, নীতিগতভাবে যদি সিদ্ধান্ত নেন- আমরা বিশ্বাস করি, তাহলে সংলাপের একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হতে পারে। আমাদের বক্তব্যটা কি কোনো অন্যায় দাবি। এ ব্যাপারে আমরা নাকি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছি। আমি আমার ভোটের অধিকার চাই, এটা চক্রান্ত হবে কেন? আমি একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই, এটা এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার যারা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে- তারা কি একটা সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন দেবে, এটা কোনো বেকুবে বিশ্বাস করে? এটা কেউ বিশ্বাস করে না। গতকাল (রোববার) শুনলাম একজন নেত্রী রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করেছেন। এ রকম কথা শুনা যাচ্ছে যে, আলাপ-আলোচনা করে কয়েকদিন তফসিলটা পিছিয়ে দেয়া যায় কিনা। এর মধ্য দিয়ে তারা জনগণকে দেখাতে চায়, আজকে তারা আলোচনার ফাঁদে বিরোধী দলকে ফেলতে চায়।’
সাইফুল হক বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে মনে করি, নিশ্চয়ই রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে চাই। তার জন্য আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনী তফসিল পেছানো না, যে তফসিল দিয়েছেন- ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন, অনতিবিলম্বে সেই তারিখ স্থগিত ঘোষণা করতে হবে, বিরোধী দলের নেতারা যারা জেলখানায় আছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল বিরোধী দলের নেতাদেরকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেবার ব্যবস্থা করতে হবে এবং হয়রানিমূলক সাজানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে আলাপ-আলোচনা-সংলাপের একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করুন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার ভাবছে- এই পুলিশ দিয়ে, বিজিবি দিয়ে, র্যাব দিয়ে, দমনপীড়ন করে তারা (সরকার) একতরফা নির্বাচন পার করে ফেলবে। তারা আরেকটি নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় বসবে, তারপর বিদেশিদের পায়ে-টায়ে ধরে সব ব্যবস্থা করে ফেলবে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। আসলে পুরো বাংলাদেশটাকে নিয়ে একটা খাদের দিকে এগুচ্ছে। তারা আমাদেরকে খাদের মধ্যে ফেলতে চায়, আমাদের দেশটাকে ধবংস করতে চায়। এই ক্ষমতাকে রাখার জন্য দেশ নিয়ে বাজি ধরে যা ইচ্ছা তাই আজকে করছে। বাংলাদেশের সব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, এই আমলাতন্ত্র, এই পুলিশ বাহিনী, এই সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আজকে তারা ধবংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার কর্মসূচি আসছে। আপনারা (সরকার) যদি ভেবে থাকেন পুলিশ-বিজিবি দিয়ে সর্বাত্মক দমন করে আর কিছু গাড়ি-ঘোড়া চলার ভয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন শেষ হয়ে গেলো, মোটেই সেটা ভাববেন না। আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে। সরকারের বরং পায়ের তলায় মাটি নাই, ওদের বরং ভেতরে কম্পমান দশা, এই কম্পমান দশা আরেকটু জোরে ধাক্কা লাগবে। আমরা জনগণের ওপর ভর করে জোরে ধাক্কা দেয়ার কর্মসূচি নিয়ে আসবো। আপনারা মানুষের সংগ্রামের তোড়ে টিকতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, কেবলমাত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার জন্য যারা দেশকে বাজি ধরে, যারা দেশকে বিপদের মধ্যে ফেলে, মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলে- তারা আর এই কৌশল করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। সেই লড়াই আসছে। আগামী দিনে অবরোধ-বিক্ষোভ-ঘেরাও নানারকম কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে আরো বড় কর্মসূচির দিকে নিয়ে যাবো এবং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য করব।
মন্তব্য করুন