তপশিল ঘোষণা ও নির্বাচন আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। সোমবার (২০ নভেম্বর) এই বিবৃতি দেন তারা।
বিবৃতিতে দেশের ৪৭ জন নাগরিক বলেছেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকার সম্প্রতি আরও একটি ‘একতরফা’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরই অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা দায়ের করা হচ্ছে, তাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরইমধ্যে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে বিরোধী দলের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সরকারের একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে বলে আমরা মনে করি।’
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা অতীতের দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি- একতরফা, বিতর্কিত ও সাজানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জবাবদিহিতা থাকে না; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, দুর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচার ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও একটি বিতর্কিত এবং একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশকে গভীরতর সংকটে নিপতিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে তাদের এবং অন্যান্য অংশীজনের সাথে আলোচনা করে নির্বাচন উপযোগী একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা একইসঙ্গে সংলাপের পথ উন্মুক্ত রাখার স্বার্থে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, ‘আমরা মনে করি, অতীতের একতরফা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পরও দেশি-বিদেশি নানা মহলের সংলাপের আহ্বানকে উপেক্ষা করে সরকার যদি আরও একটি অনুরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব মূলত সরকারকে বহন করতে হবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সাবেক কেবিনেট সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের ভিজিটিং অধ্যাপক স্বপন আদনান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মানবাধিকার কর্মী শিরিন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, লেখক রেহনুমা আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, চিন্তক অরূপ রাহী, লেখক রাখাল রাহা, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক রায়হান রাইন, লেখক ও নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, অধ্যাপক আল মামুন, কবি সাখাওয়াত টিপু, অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন, সুব্রত চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী হানা শামস আহমেদ, চিকিৎসক ও সমাজকর্মী নায়লা জামান খান, ড. মোশরেকা অদিতি হক, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, লেখক ড. মারুফ মল্লিক, যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি গবেষক মাইদুল ইসলাম, নৃবিজ্ঞানী নাসরিন খন্দকার, কথাসাহিত্যিক এহ্সান মাহমুদ, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী বাকি বিল্লাহ, সাংবাদিক মনির হায়দার, শিল্পী ও সংগঠক অমল আকাশ, সহকারী অধ্যাপক আর রাজী, কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী, কবি ও উন্নয়নকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, মানবাধিকার কর্মী রোজিনা বেগম, প্রকাশক সাঈদ বারী, গবেষক ড. সাদাফ নূর, চলচ্চিত্র নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম, লেখক জিয়া হাসান, লেখক আসিফ সিবগাত ভূঞা, সহকারী অধ্যাপক জিএইচ হাবীব ও অধ্যাপক ড. মোস্তফা নাজমুল মানছুর তমাল।
মন্তব্য করুন