বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করার পর থেকে চমকপ্রদ নানা তথ্য আসছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশিষ্ট নাগরিক ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কুষ্টিয়া-৩ (সদর) ও তার মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
আমীর-উল ইসলাম যে আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, সেই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। আর কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সেলিম আলতাফ, সেখানে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সংগঠক, ঘোষণাপত্র রচয়িতা এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের একজন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার তিনি আইনজীবী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলের ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তিনি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে ওই বছরের ১০ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা ছিলেন আমীর-উল ইসলাম। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তরুণ আইনজীবী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে কুষ্টিয়ার একটি নির্বাচনী আসনে জয়লাভ করেন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জেলার একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েও জয়লাভ করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আমীর-উল ইসলাম। ৮৭ বছরের প্রবীণ এ আইনজীবী জীবন সায়াহ্নে সংসদ সদস্য হতে চান।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে তরুণ আইনজীবী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে কুষ্টিয়ার একটি নির্বাচনী আসনে জয়লাভ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জেলার একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েও জয়লাভ করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আমীর-উল ইসলাম। ৮৭ বছরের প্রবীণ এ আইনজীবী জীবন সায়াহ্নে সংসদ সদস্য হতে চান।
২০০১ সালে কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়ন পান। কিন্তু পাতানো ও সাজানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হওয়ার পর দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। নির্যাতিতদের পক্ষে ওই সময় তিনি ব্যাপকভাবে আইনি সহায়তা প্রদান করেন। দেশব্যাপী বার কাউন্সিলের নেতা হিসেবে মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে জাতীয় কনভেনশন সফলভাবে সম্পন্ন করেন।
অধ্যাপক ইয়াজউদ্দীন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে তা চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলা দায়ের করেন। মামলা শুনানি কালে তৎকালীন এ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর পরামর্শে প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ভেঙে দেন। ফলে তিনি এবং তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে তৎকালীন এ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর সাথে উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষুপ্ত আইনজীবীরা বিক্ষোভ করলে আমীর-উল ইসলামসহ অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়, যা আজও নিষ্পত্তি হয়নি।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থা অধ্যাদেশ, ২০০৭ এর আওতায় মামলা দায়ের করা হয়। সেনাসমর্থিত সরকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আব্দুল জলিল, শেখ সেলিম প্রমুখ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং অবৈধ মামলায় দণ্ডিত করার অপচেষ্টা চলে।
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম সর্বপ্রথম জরুরি অবস্থা বিধিমালা, জরুরি অবস্থা অধ্যাদেশ এবং তৎকালীন কেয়ারটেকার সরকারের অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করেন। বেগম সুলতানা কামাল বনাম বাংলাদেশ মামলায় ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম জরুরি অবস্থা বিধিমালা, ২০০৭ এবং এর অধীন অজামিনযোগ্য বিধান বাতিল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া অন্য কতিপয় মামলায় কেয়ারটেকার সরকারের রুটিন কাজ ছাড়া অন্য কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংবিধানসম্মত নয় মর্মে আদেশ জারি হয়।
তিনি কৌশলে অন্যদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবু বনাম বাংলাদেশ শীর্ষক মামলাটি (জরুরি অবস্থা অধ্যাদেশ, ২০০৭ এবং তৎকালীন সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ড চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলা) বিচারপতি খায়রুল হক সাহেবের কোর্টে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় শীর্ষে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন যাতে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের অবৈধতার বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। আমিরুল ইসলাম এবং অন্যান্যদের শক্ত ভূমিকার কারণে কেয়ারটেকার সরকার ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে, যার মাধ্যমে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক মর্মে আব্দুস সালাম বনাম বাংলাদেশ শীর্ষক মামলায় আইনজীবী হিসেবে তিনি দেখিয়ে দেন সংবিধান, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ২৫ মার্চের গণহত্যা শুরুর পর বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, যেটি আন্তজার্তিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনা, চতুর্থ তপশিল, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার ইত্যাদির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির যে অপচেষ্টা চলছিল তা বন্ধে আমীর-উল ইসলাম ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মন্তব্য করুন