বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়েরের মতো অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন করে তাদের দিয়ে গায়েবি জবানবন্দিও নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন তিনি।
বিবৃতিতে যুবদল সভাপতি টুকু বলেন, রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে, দিনের পর দিন গুম রেখে, অমানুষিক অত্যাচার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে যেসব স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে- তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে গায়েবি মামলার পর আদালতে গায়েবি বিচারের মতো এগুলোও গায়েবি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, যা জনগণ কখনোই বিশ্বাস করে না।
সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী নাশকতার ঘটনায় যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে গাজীপুরে ট্রেনলাইন কাটার ঘটনায় আটক ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির তার জবানবন্দিতে টুকুর ইন্ধনে এ কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে বিএনপির দাবি, ইখতিয়ার রহমান কবিরকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর চার দিন নিখোঁজ রেখে অকথ্য নির্যাতন করে এ স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক থেকে এখন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি। সরকার মনে করেছে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে সরকার টিকে থাকতে পারবে। গুম করেছে, হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলায় অমানুষিক নির্যাতন করে মিথ্যা জবানবন্দি নিচ্ছে। গায়েবি মামলা, গায়েবি সাজা দেওয়ার মতো গায়েবি জবানবন্দি নিয়ে কখনো পার পাওয়া যাবে না, মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করে মনে করেছেন- অন্যায়ভাবে এই আন্দোলনকে দমন করবেন। কিন্তু মানুষ আর বোকার স্বর্গে বাস করছে না। মানুষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন দেখতে চায় না। এ সরকার ডামি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। এরই মধ্যে এই নির্বাচন ড্যাম (ধ্বংস) হয়ে গেছে মানুষের কাছে। কারণ মানুষ মনে করছে- নির্বাচনের নামে পিঠা ভাগাভাগি করতে গণভবনে বসে নির্বাচনের আসন বণ্টন করা হচ্ছে। কী নির্লজ্জভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে কাজ করছে এ সরকার।
টুকু বলেন, মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। দেশের ৬ কোটি ভোটার যারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট দিতে পারেনি, সেই ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করতে এ দেশের তরুণ, ছাত্র ও যুবসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের দাবি একটিই- এ সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরাপদে ভোট দিতে চান। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে, মিথ্যা জবানবন্দি নিয়ে কখনো রাজপথ থেকে সরিয়ে রাখা যাবে না। সরকার মনে করেছে, ভয়ে ভীত হয়ে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব- সেটা কখনো হবে না।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে যুবদলের এই সভাপতি বলেন, আসুন সবাই- সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। সত্যের জয় একদিন হবেই, মিথ্যা পরাজিত হবেই। যারা অন্যায় করছেন, তাদের বিচার এক দিন বাংলার মাটিতে হবেই, জয় অনিবার্য। এই বিজয়কে কেউ রুখতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি। এবারও অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না। সবাই আগামী দিনে সকল ভয়-ভীতি, নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে বাংলাদেশে রাস্তায় নেমে আসুন।
মন্তব্য করুন