বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের মাত্র মাস ছয়েক আগে ইসিকে ক্ষমতাহীন-নখদন্তহীন করার উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথকে রুদ্ধ করার জন্য এটি শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যান। এতে আবারও প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনার অভিধানে সুষ্ঠু নির্বাচন নেই।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
সরকারি দলের নেতাদের ‘সংলাপ’ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘তাদের সংলাপের কথা মাটিতে পড়ার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সংলাপ নিয়ে আওয়ামী নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে তারা জনগণের কাছে জাতীয় তামাশার মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এতে জনগণ বিমূঢ় বোধ করলেও জাতির সঙ্গে তামাশা করাটাই যেন আওয়ামী লীগের ‘পপুলার সংস্কৃতি’। তারা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি সবসময় এড়িয়ে যায়। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কথা শুনলেই শাসকগোষ্ঠীর ক্রোধবহ্নি জ্বলতে থাকে। অবশ্যই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনই হবে সংলাপ বা যে কোনো আলোচনার মূল ভিত্তি বা এজেন্ডা। কারণ এরা দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে নির্বিকার ও নিবিষ্টচিত্রে। সুতরাং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে ওঠার শামিল।’
রিজভী বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার নানামুখী গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে নিশিরাতের সরকার। একের পর এক দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে শেখ হাসিনা দেশে নিষ্ঠুর নাৎসি শাসন অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী আজীবন ক্ষমতায় থাকতে ও দুর্নীতিকে অবাধ রাখার জন্য সংবিধান কাটাছেঁড়া করে সংশোধনী, কালাকানুন, ইনডেমনিটি সবকিছু পাস করে নিয়েছেন বিনা ভোটের অবৈধ সংসদে। জাতীয় সংসদে বুধবার পুরো ভোট বাতিলের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস করেছে শেখ হাসিনার ভুয়া ভোটের এমপিরা।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘নিজের স্বাধীনতাকে বিক্রি করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়, এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ‘ম্যানিপুলেট’ করার একটি মেশিন। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের কারণে চলমান নির্বাচন বাতিলের যে ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ছিল তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান থাকলেও এখন সরকারের দুর্নীতিবাজ লুটেরা ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং এর সারবত্তা নিঃশেষ করে দেওয়া হলো। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র মাস ছয়েক আগে ইসিকে ক্ষমতাহীন-নখদন্তহীন করার উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথকে রুদ্ধ করার জন্য এটি শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যান। এতে আবারও প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনার অভিধানে সুষ্ঠু নির্বাচন নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই সংশোধনী দুরভিসন্ধিমূলক। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার বেপরোয়া মনোভাব আরও বেশি প্রকট হলো। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হলেও যাতে কিছু করতে না পারে সেজন্য এই রক্ষা কবচ। শুধু কেন্দ্রভিত্তিক ভোট বাতিলের ক্ষমতা রাখলে কেন্দ্রের বাইরে ওই নির্বাচনী এলাকায় কোনো ভোটারকে বাধা প্রদান বা ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করলে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার ক্ষমতা থাকল না। তাদের দলীয় ক্যাডার, ছাত্রলীগ থেকে রিক্রুট করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রশাসন দিয়ে সব ভোটকেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করবে, বলপ্রয়োগ, হাঙ্গামা, ভীতি-প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টি করবে। আর নির্বাচন কমিশন দুই-তিনটি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে নাটক করে ভোট বাতিল করলেও আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত। এটাই আওয়ামী লীগের নতুন ফর্মুলা।’
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, অধ্যাপক ওয়াহিদ ইমতিয়াজ বকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন