ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে পর পর তিনবার জনগণের ভোট ছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ জবাবদিহিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে বিদ্যুৎখাতকে।
শনিবার (১৮ মে) বিকেলে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘বিদ্যুৎ : আলো থেকে অন্ধকারে যাত্রা’- শীর্ষক এক সেমিনারে মান্না এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ভিন্নভাবে বললে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকখাতসহ শিল্প কারখানার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। ২০০১ সালের চারদলীয় জোট সরকার ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। এতে দেশব্যাপী লোডশেডিং দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পোশাক খাতসহ শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চারদলীয় জোট সরকারের পর এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ল তখন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে সংসদে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ নামে একটা আইন পাস করা হলো। অর্থাৎ বিদ্যুৎ খাতের সেই ইনডেমনিটি আইন। শুরু হয় বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের মহোৎসব।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমানোর অজুহাতে গত ১৫ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার এবং খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। সম্প্রতি আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমাতে বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অথচ বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির প্রায় পুরোটাই চলে যাচ্ছে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সরকারের অলিগার্কদের পকেটে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের পকেট কাটার আরেক হাতিয়ার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ডিমান্ড চার্জ এবং মিটার ভাড়া আদায় করা। অথচ বিদ্যুতের মিটার একজন গ্রাহক নিজে কেনেন। নিজের কেনা মিটারের ভাড়া প্রতি মাসে সরকারকে দিতে হয়। বিষয়টা ঠিক ‘নিজের জমিতে নিজের খরচে বাড়ি করে ভাড়া দিয়ে থাকার মতো’।
মান্না বলেন, শুধু বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাত নয়; দেশের ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে অর্থনীতির সব ক্ষেত্র আজ গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। বিদ্যুৎসহ সব খাতে সরকারের স্বজনতোষী নীতি আর অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গড়ে তোলা অলিগার্ক গোষ্ঠীর পকেটে জনগণের টাকা তুলে দিতে গিয়ে দেশকে নিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। একইসঙ্গে অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পরাশক্তির সমর্থন আদায় করতে সরকার তাদের দেশের স্বার্থবিরোধী সুযোগ সুবিধা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে চেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই জবাবদিহিহীন কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে দেশের অর্থনীতি, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যাবে না।
মান্নার সভাপতিত্বে সেমিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন