আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আজিজ-বেনজীরের মতো অনেক রূপকথার কাহিনি আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশ থেকে যে লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, লুট হচ্ছে, ব্যাংক শূন্য হচ্ছে, রাজকোষ শূন্য হচ্ছে- আমরা তো শুধু দুজনের কথা শুনেছি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং পুলিশপ্রধান। তাদের যে রূপকথার কাহিনি শুনেছি- এ রকম আরও যারা সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করেছে, গুম-খুন এবং নানা অত্যাচারে লিপ্ত ছিলেন তাদের কাহিনি তো আমরা জানি না। আমরা না জানলেও কথাগুলো তো মানুষের কাছে আছে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে রিজভী এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা পরিষদের উদ্যোগে আহবাব চৌধুরী খোকনের সম্পাদনায় ‘জিয়াউর রহমান অনন্য রাষ্ট্রনায়ক’ শীর্ষক গ্রন্থের এই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা যদি আমেরিকায় যান সেখানে আন্দোলন হলে সেই ছবিগুলো তুলে রাখা হয় এবং পরবর্তীকালে সে আন্দোলনকারী বাংলাদেশে এলে এয়ারপোর্টেই গ্রেপ্তার করে। শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়েছিলেন, সেখানে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। সেই ছবিগুলো গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীরা যখনই বাড়িতে আসে, গোয়েন্দারা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছে, গ্রেপ্তার করে থাকে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ- এরা যে এতকিছু করেছেন, এটা কি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না? আওয়ামী লীগ সরকার কি কিছু জানত না?
তিনি বলেন, আজকের আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমান সরকারের কাছে রেজিস্ট্রেশনের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ হয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের প্রতিও জিয়াউর রহমানের অবদান রয়েছে। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের অন্তরে হচ্ছে মানুষকে নিপীড়ন করা, ক্ষমতাকে স্থায়ী করে রাজত্ব কায়েম করা। এজন্য তারা উদারতাকে পছন্দ করে না। নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ- এটাও তারা প্রতিষ্ঠা করে। এজন্য তারা জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি বিদ্বেষ দেখায়। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যে গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ নন, সেটি তারা প্রমাণ করছেন। রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য উনাদের মধ্যে কোনো নীতি-নৈতিকতা এবং জনগণের কাছে অঙ্গীকার এ রকম কিছুই নেই। উনারা রাজনীতিকে একটা প্লট, প্রতারণা বলে মনে করেন। উনারা জনগণের কাছে অনেক ওয়াদা করেন, কিন্তু সেটি রক্ষা না করাকেই রাজনীতি বলে মনে করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দেড় লাখ বাড়িঘর তছনছ হয়ে গেছে। ১৬ জন মানুষ মারা গেছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে যাতে দৃষ্টি না যায়, সেজন্য তিনি (শেখ হাসিনা) পরশুদিন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। উনাদের মনের মধ্যে থাকা প্রতিহিংসা ও ক্ষোভগুলো এমনই ঘূর্ণিঝড় তৈরি করে যে, সেটা প্রকাশ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে যান। জনগণ জলোচ্ছ্বাসে বাঁচল কি মরল, এটুকু বোঝার খেয়াল পর্যন্ত উনাদের নেই। উনাদের টার্গেট হলো যে কোনো মূল্যে যে কোনো অবস্থায় জিয়া পরিবারকে আক্রমণ করা। ঘূর্ণিঝড়ে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া, সাহায্য করা, খাবার দেওয়া- এগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই।
রিজভী বলেন, এ সরকার নিজেদের লোকগুলোকে অর্থ-বিত্তে আঙুল ফুলে কলাগাছ করার জন্য নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজকে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে তাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই উন্নয়ন যে লোক দেখানো, সেটা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার বহু জায়গায় প্রায় ১৫-১৬ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ নেই। আমাদের যে মেট্রোরেল করা হয়েছে সেখানে বিদ্যুৎ দশ মিনিট পর পর যায় আর আসে। উন্নয়ন টেকসই হয়নি। উন্নয়নের নামে যে অনেক টাকা চুরি হয়ে গেছে, এটা এই সরকারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত। এখন চলছে আন্তর্জাতিক গুম দিবসের একটা সপ্তাহ। বাংলাদেশে গুম-খুন, অত্যাচারের যে কাহিনি-আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রত্যেকেই এই সম্পর্কে রিপোর্ট করছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, ডিইউজের (একাংশ) সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বকুল প্রমুখ।
মন্তব্য করুন