সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে তৃণমূলে সংগঠন ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে মাঠে নেমেছে বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। সংগঠনের নেতারা সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরে করছেন মতবিনিময় সভা। গত ২৪ মে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জে মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে সাতটি সাংগঠনিক জেলায় মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়েছে। ৬ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত আরও সাত জেলায় সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় এই মতবিনিময় সভা হবে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে বলে কৃষক দল সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, জেলায় এসব মতবিনিময় সভায় তৃণমূল নেতাদের সাংগঠনিক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি সংগঠনের কারামুক্ত নেতাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। বিগত আন্দোলন ঘিরে হামলা ও নির্যাতন-নিপীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসুস্থ নেতাদের বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজখবরও নিচ্ছেন কৃষক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে সংগঠন ও নেতাকর্মীদের প্রকৃত অবস্থাও জানতে পারছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মতবিনিময় সভা শেষে কেন্দ্রের কাছে সাংগঠনিক প্রতিবেদন জমা দিবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
কৃষক দল সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলকে চাঙ্গা-উজ্জীবিত করাই কৃষক দলের এই সাংগঠনিক জেলা সফরের মূল উদ্দেশ্য। তবে মতবিনিময় সভার কার্যক্রম সম্পন্ন হলে কমিটি না থাকা চারটি জেলায় নতুন কমিটি গঠন করা হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে এসব জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭৮টি সাংগঠনিক জেলায় কমিটি রয়েছে কৃষক দলের। এগুলোর মধ্যে সম্প্রতি দু-একটি কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বছরের অধিক কালব্যাপী রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বিএনপি। কৃষক দলের নেতারা জানান, সরকারবিরোধী সেই আন্দোলনে ঢাকাসহ সারা দেশে কৃষক দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। সাংগঠনিক সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে তারা আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে ছিলেন। আন্দোলন দমাতে কৃষক দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নির্যাতন-নিপীড়নে অনেকে আহত হন। তারপরও নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন। তবে রাজপথের আন্দোলনে ‘চূড়ান্ত সফলতা’ না আসায় বিএনপি ও অন্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মতো কৃষক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ‘হতাশা’ ভর করে।
কৃষক দল নেতাদের প্রত্যাশা, জেলা সফরে সাংগঠনিক নানাবিধ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিগত আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট ‘হতাশা’ কাটিয়ে নেতাকর্মীরা পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন, যা সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন সফলে সহায়ক হবে।
কৃষক দল নেতাদের জেলা সফর প্রসঙ্গে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন কালবেলাকে বলেন, দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। এ জন্য আমরা তৃণমূলে সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত, শক্তিশালী ও গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে আমরা সাংগঠনিক জেলাগুলোতে মতবিনিময় সভা করছি। ঈদুল আজহার পর আরও ১৫-২০ দিন এই কার্যক্রম চলবে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল কালবেলাকে বলেন, জেলা সফরকালে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি বিগত আন্দোলন ঘিরে গ্রেপ্তার হওয়া কৃষক দলের কারামুক্ত নেতাদের সংবর্ধনাও দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অসুস্থ নেতাদের বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা, এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সারাদেশে কৃষক দল সাংগঠনিকভাবে আরও বেশি শক্তিশালী ও গতিশীল হবে।
সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের পর তৃণমূলে সংগঠন ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে গত ১১ মে দশটি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করে কৃষক দল। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদকদের নেতৃত্বে এক সদস্যের এসব টিম গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে ৭টি জেলা ও মহানগরে মতবিনিময় সভা করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেগুলো হলো-সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা দক্ষিণ ও চাঁদপুর জেলা এবং রাজশাহী মহানগর।
বুধবার (৫ জুন) বিকেলে কৃষক দলের দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও সাত জেলায় মতবিনিময় সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সূচি অনুযায়ী, কৃষক দল সভাপতির নেতৃত্বে ৬ জুন সাতক্ষীরা, ৭ জুন কুষ্টিয়া ও ৮ জুন রাজবাড়ি জেলা এবং ৯ জুন ফরিদপুর জেলা ও মহানগরে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল বাশার আকন্দের নেতৃত্বে ৭ জুন রংপুর ও ৮ জুন লালমনিরহাট জেলায় মতবিনিময় সভা হবে।
কৃষক দল গঠিত সাংগঠনিক টিমসমূহ:
ঢাকা বিভাগ : টাঙ্গাইল জেলায় কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন (সভাপতি), গাজীপুর জেলা ও মহানগরে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, ঢাকা জেলায় শহিদুল ইসলাম বাবুল (সাধারণ সম্পাদক), মানিকগঞ্জ জেলায় শহিদুল ইসলাম বাবুল, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং মুন্সিগঞ্জ জেলায় শাহ আব্দুল্লাহ আল বাকী (যুগ্ম সম্পাদক)।
ফরিদপুর বিভাগ : ফরিদপুর জেলা ও মহানগর এবং রাজবাড়ি জেলায় কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন; মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় সৈয়দ অলিউল্লাহ সিদ্দিকী (সহ-সভাপতি)।
চট্টগ্রাম বিভাগ : নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলায় কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন; চট্টগ্রাম মহানগর এবং চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় শহিদুল ইসলাম বাবুল।
কুমিল্লা বিভাগ : কুমিল্লা মহানগর এবং কুমিল্লা দক্ষিণ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মামুনুর রশীদ খান (সহ-সভাপতি); কুমিল্লা উত্তর ও চাঁদপুর জেলায় কৃষিবিদ মিজানুর রহমান লিটু (যুগ্ম সম্পাদক)।
সিলেট বিভাগ : সিলেট মহানগর, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় শহিদুল ইসলাম বাবুল; হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় খন্দকার নাসিরুল ইসলাম (সহ-সভাপতি)।
ময়মনসিংহ বিভাগ : ময়মনসিংহ মহানগর এবং ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন (যুগ্ম সম্পাদক); কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোণা জেলায় কৃষিবিদ শাহাদাৎ হোসেন বিপ্লব (যুগ্ম সম্পাদক)।
খুলনা বিভাগ : কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা জেলায় কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন; খুলনা মহানগর এবং খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় জামাল উদ্দিন খান মিলন (সহ—সভাপতি); যশোর, নড়াইল, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় মো. ইউসুফ আলী মোল্লা (যুগ্ম সম্পাদক)।
বরিশাল বিভাগ : বরিশাল মহানগর, বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ এবং ভোলা জেলায় মো. ফজলে হুদা বাবুল (যুগ্ম সম্পাদক); পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় শাহ আব্দুল্লাহ আল বাকী (যুগ্ম সম্পাদক)। পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা : কৃষিবিদ শাহ মোঃ মুনিরুর রহমান (যুগ্ম সম্পাদক)।
রাজশাহী বিভাগ : সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলায় কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন; পাবনা জেলায় শহিদুল ইসলাম বাবুল; রাজশাহী মহানগর এবং রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় ব্যারিস্টার ওবাইদুর রহমান টিপু (যুগ্ম সম্পাদক)।
রংপুর বিভাগ : রংপুর মহানগর এবং রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় অ্যাডভোকেট আবুল বাশার আকন্দ (সহ—সভাপতি); নীলফামারী, গাইবান্ধা ও সৈয়দপুর জেলায় কর্নেল (অব.) এস এম ফয়সাল (সহ-সভাপতি); দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় আ ন ম খলিলুর রহমান (ভিপি ইব্রাহিম) (সহ-সভাপতি)।
মন্তব্য করুন