

এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ খেলতে কুয়েতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সেরা দল বসুন্ধরা কিংস মাঠের পারফরম্যান্সে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। ওমানের আল-সিব ক্লাবের কাছে ২-৩ গোলে এবং লেবাননের আল-আনসার ক্লাবের কাছে ০-৩ গোলে পরাজিত হয়ে দলটি এখন টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের পথে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) স্বাগতিক কুয়েতের কেএসসি ক্লাবের মুখোমুখি হওয়ার আগে মাঠের বাইরেও নতুন বিতর্কে জড়ালো দলটি।
বসুন্ধরা কিংসের টিম ম্যানেজার এসএম ওয়াসিমুজ্জামানের বিরুদ্ধে কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের অসহযোগিতা ও চরম দায়িত্বহীন আচরণের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কুয়েত।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ এই সাংবাদিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আ. হ. জুবেদ অভিযোগ করেন, কিংস ম্যানেজারের ‘গাফিলতি’ ও সমন্বয়হীনতার কারণে কুয়েতে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত মিডিয়া কার্ড পাননি প্রেস ক্লাবের অধিকাংশ সাংবাদিক। এমনকি, যিনি প্রথম কিংস ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন, সেই আ. হ. জুবেদ নিজেও কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে জুবেদ জানান, বসুন্ধরা কিংস কুয়েতে আসার প্রায় দেড় মাস আগেই তিনি টিম ম্যানেজার ওয়াসিমুজ্জামানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে কুয়েত প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে যে-কোনো ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দেন। তখন ওয়াসিমুজ্জামান জানান, কুয়েত থেকে তিনিই প্রথম ফোন করেছেন এবং সময়মতো সবকিছু জানিয়ে দেবেন। পরবর্তীতে গত ১৯ অক্টোবর বাফুফে থেকে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে পাঠানো একটি ই-মেইলের অনুলিপি বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কুয়েতকেও দেওয়া হয়। সেদিন ওয়াসিমুজ্জামান নিজে সেই ই-মেইলের স্ক্রিনশট আ. হ. জুবেদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে জানান যে, ‘আপনাদের পরামর্শ মোতাবেক ই-মেইল করেছি।’
গত ২১ অক্টোবর কিংস দল কুয়েতে আসার পর থেকেই ওয়াসিমুজ্জামানের আচরণে ‘দায়িত্বহীনতা’ লক্ষ করে প্রেস ক্লাব। জুবেদ অভিযোগ করেন, ‘কিংস দল কুয়েতে আসার পর আমরা লক্ষ করেছি যে, এসএম ওয়াসিমুজ্জামান নিজে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে দায়িত্বহীন আচরণ করেছেন।’ তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য বারবার ফোন করেও ওয়াসিমুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন সাংবাদিকরা।
অনেক চেষ্টার পর একবার কথা হলে ওয়াসিমুজ্জামান জানান, খেলা কাভার করার জন্য মাঠে মিডিয়া কর্নারে প্রবেশ করতে সব সাংবাদিকের আইডেন্টিটি কার্ড এবং ছবি লাগবে। প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সেসব পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কিংসের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাবকে ২৪ অক্টোবর রাত ৮টায় হোটেল থেকে মিডিয়া কার্ড সংগ্রহ করার জন্য বলা হয়। কিন্তু প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি দল নির্ধারিত সময়ে হোটেলে গেলে তাদের জানানো হয়, ‘কার্ড প্রস্তুত হয়নি।’
পরবর্তীতে, কিংসের সহকারী ম্যানেজার মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন রক্সি ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে কার্ড সংগ্রহের নতুন সময় দেন। কিন্তু সেদিনও হোটেলে গেলে রক্সি কার্ড প্রদান না করে পরামর্শ দেন যেন সাংবাদিকরা মাঠের প্রবেশপথ থেকে মিডিয়া কার্ড সংগ্রহ করে নেন। সহকারী ম্যানেজারের পরামর্শ অনুযায়ী, গত ২৫ অক্টোবর খেলার দুই ঘণ্টা আগে সাংবাদিকরা মাঠে গিয়েও মিডিয়া কার্ড পাননি। মাঠের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, তাদের কাছে সাংবাদিকদের জন্য প্রস্তুতকৃত কোনো মিডিয়া কার্ড নেই।
আ. হ. জুবেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পরে আমরা জানতে পেরেছি যে, মাঠ কর্তৃপক্ষ বা এএফসি কর্তৃপক্ষ ৫ জনকে মিডিয়া কার্ড প্রদান করেছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, এই ৫ জনের মধ্যে মিডিয়ার ‘মেইনস্ট্রিমে’ কাজ করেন এমন মাত্র একজন সিনিয়র সাংবাদিক কার্ড পেলেও বাকি ৪ জন ‘অদৃশ্য এক ইশারায়’ কার্ড পেয়ে যান। জুবেদের মন্তব্য, ‘একজন তো শখের বশে মিডিয়া কার্ড সংগ্রহ করে নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬টি প্রাইভেট স্যাটেলাইট চ্যানেল, মূলধারার অনেকগুলো অনলাইন পোর্টাল ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কুয়েতের সদস্য। অথচ, আমাদের সংগঠনের সঙ্গে অফিসিয়ালি ই-মেইল লেনদেন করেও অসহযোগিতা পূর্ণ আচরণ দেখালেন কিংসের টিম ম্যানেজার।’
এ বিষয়ে শেষবারের মতো ওয়াসিমুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কার্ড পাইয়ে দেওয়া আমাদের কাজ নয়। তবুও এখন পর্যন্ত আমরা আপনাদের মিডিয়া কার্ড সংগ্রহের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কুয়েত ফুটবল ফেডারেশন আমাদের এই দাবি সম্পর্কে অবগত।’
এদিকে কিংস ম্যানেজারের এই বক্তব্যের সঙ্গে মাঠ কর্তৃপক্ষের তথ্যের সরাসরি অমিল পাওয়া গেছে। কুয়েতের জাবের আল-মোবারক আল-হামেদ আল-সাবাহ মাঠের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তালাল আহমদ নিশ্চিত করেছেন যে, ‘বসুন্ধরা কিংসের ম্যানেজারকে (ওয়াসিমুজ্জামান) ৫টি মিডিয়া কার্ড প্রদান করা হয়েছে।’ তবে টিম ম্যানেজারের এমন আচরণে কুয়েত প্রবাসী সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য করুন