আল্লাহভীরু মুমিনদের প্রিয় এক ইবাদত হলো রাত জেগে আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এই ইবাদতের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ।
রাতের নিস্তব্ধতা, নিঃশব্দ আকাশ ও প্রশান্ত পরিবেশে একজন মুমিন যখন নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সামনে হাত তোলে, তখন সেই দৃশ্যটি প্রভু-প্রেমে মোহিত করে আরশের অধিপতিকে।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে রাতের ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত বারবার বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থান মাকামে মাহমুদে। (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)
একইভাবে, অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাতে ওঠা প্রবৃত্তি দমনকারী এবং বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)
তবে সবার পক্ষে কি রাতভর ইবাদত করা সম্ভব?
সবাই তো প্রতিদিন রাতে জেগে ইবাদত করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য কিছু সহজ ও কার্যকর আমল বাতলে দিয়েছেন, যেগুলো করলে সারা রাত ইবাদতের সওয়াব অর্জন করা সম্ভব। নিচে সে রকম কিছু আমল তুলে ধরা হলো :
১. ফজর ও এশার নামাজ জামাতে আদায় করা উসমান ইবনু আফফান (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, তার জন্য অর্ধরাত নামাজের সওয়াব লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি এশা ও ফজর দুই নামাজ জামাতে আদায় করে, তার জন্য পুরো রাত নামাজে কাটানোর সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়।(তিরমিজি, হাদিস : ২২১)
২. রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, সুরা বাকারার শেষের দুই আয়াত যে ব্যক্তি রাতে পাঠ করবে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮) ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এর দ্বারা বোঝায় যে এটি সারা রাত ইবাদতের সওয়াব অর্জনের জন্য যথেষ্ট।
৩. রাতের বেলায় ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করা আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে একশ আয়াত তিলাওয়াত করে, তার আমলনামায় রাতভর ইবাদতের সওয়াব লেখা হয়। (ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস : ১১৪২)
৪. উত্তম চরিত্র ও ভদ্র স্বভাব রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে মুসলমান শরিয়তের ওপর আমলকারী হয়, সে নিজের ভদ্রতা ও উত্তম চরিত্রের কারণে এমন মর্যাদা পায়, যা সেই ব্যক্তির সমান, যে রাতে দীর্ঘ সময় কুরআন তিলাওয়াত করে ও দিনে অধিক রোজা রাখে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬৪৮)
আয়েশা (রা.) আরও বলেন, মুমিন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্র দ্বারা রোজাদার ও রাতভর নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা অর্জন করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)
৫. বিধবা ও দরিদ্রকে সাহায্য করা আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকিনদের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, সে আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো কিংবা দিনের রোজাদার ও রাতভর সালাতে রত ব্যক্তির মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)
৬. সীমান্ত পাহারা দেওয়া সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আল্লাহর পথে এক রাত সীমানা পাহারা দেওয়া এক মাসের রোজা ও নামাজের চেয়ে উত্তম। এমন প্রহরী মারা গেলে জান্নাত থেকে তার জন্য রিজিক আসতে থাকে এবং সে কবরের শাস্তি থেকে মুক্ত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ১৯১৩)
৭. কিয়ামুল লাইলের নিয়তে ঘুমানো আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমাতে যায়, কিন্তু ঘুমের কারণে উঠতে না পারে, তার জন্য নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব লেখা হবে। আল্লাহ তার ঘুমকেও সদকারূপে গ্রহণ করবেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৭৮৭)
আল্লাহর রহমত অসীম। তিনি চাহিদা অনুযায়ী নয়, নিয়ত ও সাধ্য অনুযায়ী বান্দাদের প্রতিদান দেন। রাতে ঘুমের মধ্যেও, নিয়ত করে, কিংবা সহজ কিছু আমলের মাধ্যমেও সারা রাত ইবাদতের ফজিলত অর্জন সম্ভব। আমাদের উচিত এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো এবং দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও কিছু সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বরাদ্দ করা।
মন্তব্য করুন