হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো আশুরা। অনেকের ধারণা আশুরায় শুধু কারবালার ঘটনাই ঘটেছিল। কিন্তু এ দিনে বহু স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বিভিন্ন দিক দিয়ে দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি, জান্নাতে অবস্থান, পৃথিবীতে প্রেরণ ও তওবা কবুল সবই আশুরার তারিখে সংঘটিত হয়। আল্লাহ তাআলা অনেক নবীকে অত্যাচারীদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন আশুরার দিনে।
নিচে আশুরার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো—
১. আল্লাহ তাআলা এ দিন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এ পৃথিবীর অস্তিত্বের সঙ্গেও আশুরার দিনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আশুরার দিনেই আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন আকাশমালা, মর্তজগৎ, পর্বতরাজি, লওহ-কলম ও ফেরেশতাদের। আশুরার দিনে আল্লাহ নিজ আরশে আজিমে অধিষ্ঠিত হন। তার ইচ্ছায় এ দিনেই কিয়ামত ঘটবে।
২. মহান আল্লাহ আদি পিতা আদম (আ.)-কে এই দিন জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠান। আবার এই দিন আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেন। এ ছাড়া এ দিনেই সমগ্র মানবজাতির মা ও আদম (আ.)-এর স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফার ময়দানে পৃথিবীতে প্রথম সাক্ষাৎ হয়।
৩. আল্লাহর নবী নুহ (আ.)-এর জাতির লোকেরা আল্লাহর নাফরমানি করেছিল। বারবার সতর্ক করার পরও তারা আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায়, আল্লাহর শাস্তি মহাপ্লাবনে নিপতিত হয়। দীর্ঘ প্লাবন শেষে ১০ মহররম তিনি নৌকা থেকে ইমানদারদের নিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসেন।
৪. আল্লাহর প্রিয়নবী ইবরাহিম (আ.)-কে নমরুদ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। তিনি অগ্নিকুণ্ডে ৪০ দিন থাকার পর ১০ মহররম মুক্তি লাভ করেন।
৫. আল্লাহর নবী আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি এই দিনে মহান আল্লাহর রহমতের পূর্ণ সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য লাভ করেন।
৬. হজরত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনা সবার কাছে বিখ্যাত। তিনি ইয়াকুব (আ.)-এর ছেলে ছিলেন। তার ১২ জন ভাই ছিল। কিন্তু ১১ ভাই ষড়যন্ত্র করে তাকে কূপে ফেলে দেয়। তবে মহান আল্লাহর অনুগ্রহে এক বণিক দল তাকে উদ্ধার করে। এরপর মিসরে গিয়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। এরপর ১০ মহররম দীর্ঘ ৪০ বছর পর তিনি বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
৭. আল্লাহর আরেক নবী হজরত ইউনুস (আ.) জাতির লোকদের প্রতি হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর নদী অতিক্রম করে দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান। পথে মাঝনদীতে পতিত হন। আর তখন তাকে একটি বড় মাছ গিলে ফেলে। মাছের পেটে তিনি ৪০ দিন ছিলেন। এরপর ১০ মহররম আল্লাহর রহমতে মাছ তাকে নদীর তীরে ফেলে দেয় এবং তিনি মুক্তি লাভ করেন।
৮. বনি ইসরায়েলের নবী হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের জুলুম থেকে বাঁচতে সঙ্গী-সাথিসহ অন্যত্র চলে যান। নীল নদ পার হয়ে নিরাপদে পৌঁছে যান। আর ফেরাউন তার দলবলসহ নীল নদীর পানিতে ডুবে মারা যায়।
৯. ঈসা (আ.)-কে তার জাতির লোকেরা হত্যা করার চেষ্টা করে। ফলে ১০ মহররম মহান আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন।
১০. কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা। মহররমের ১০ তারিখ এই মর্মন্তুদ ঘটনার অবতারণা হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আল্লাহর নবী (সা.)-এর নাতি হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন।
‘শুধু কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০ মহররমকে শোকের জন্য বেছে নেওয়া উচিত নয়।’ (ইমদাদুল মুফতিয়িন: ১/৯৬)
মন্তব্য করুন