সন্তান, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদসমূহের একটি। সন্তান যখন মায়াভরা কণ্ঠে ডাকে, মা-বাবার সব দুঃখ মুছে যায়। হৃদয়জুড়ে আনন্দ-বন্যা বয়ে যায়। সন্তানের সুখের জন্য মা-বাবা নিজেদের ঢেলে দেন। জীবন বিলিয়ে দেন। সহজ কথায়, মা-বাবার কাছে সন্তানের কোনো তুলনা নেই। সন্তানই তাদের সব সম্পদ। সব সুখ। কিন্তু জানেন কি, সন্তান লালন-পালনে সঠিক ও শরিয়া পদ্ধতি অবলম্বন না করলে বড় বিপদ হতে পারে! কলিজার টুকরো সন্তানই আপনার সব অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই শুরু থেকেই সন্তানকে ইসলামের আলোকে লালনপালন করা উচিত।
জন্মের পর সাধারণত প্রত্যেক সন্তানই তার বাবা-মায়ের কোলঘেঁষে, বিছানাজুড়ে বড় হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন তার বয়স বাড়তে থাকে, তখন অনেক বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পড়েন এটা ভেবে যে, সন্তানের আলাদা বিছানা কখন করবেন, কত বছর বয়সে তাকে পৃথকভাবে ঘুমাতে দেবেন। চলুন তাহলে জেনে নিই, কত বছর বয়সে আপনার সন্তানের বিছানা আলাদ করবেন।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, সন্তানের বয়স ১০ বছর হলে তাকে পৃথক বিছানায় শোয়ানোর ব্যবস্থা করা জরুরি। এ বয়সের পর একসঙ্গে থাকা যাবে না কোনোভাবেই। এক্ষেত্রে যখনই তার বয়স সাত বছরে পা দেবে, তখন থেকেই তাকে আলাদা থাকার বিষয়ে তাগিদ ও ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে বাবা-মায়ের শোয়ার রুমেই ছোট একটি খাটের মাধ্যমে তাদের শোয়ার ব্যবস্থা করবে। পরে ধীরে ধীরে আলাদা রুমে শিফট করবে। এভাবে সন্তানদের অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
কিছু বর্ণনায় সাত বছরের কথাও এসেছে। সেই হিসেবে সাত বছর বয়স হলেই বিছানা পৃথক করা সতর্কতা। তবে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত অবকাশ আছে। ১০ বছর হয়ে গেলে বিছানা পৃথক করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকার পরেও তা না করলে পাপ হবে।
১০ বছর বয়সের পর বাবার সঙ্গে ছেলের এবং মায়ের সঙ্গে মেয়ের শোয়ার অবকাশ আছে। তবে, এ ক্ষেত্রেও আলাদা থাকার সুযোগ থাকলে একসঙ্গে থাকা থেকে বারণ করা হয়েছে।
হজরত আমর ইবনু শুআইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাজের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স দশ বছর হয়ে যাবে, তখন নামাজ আদায় না করলে তাদের শাসন করবে। তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দেবে (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৫, মুসনাদে আহমাদ : ৬৬৮৯)।
হজরত আব্দুর রহমান বিন আবি সাঈদ তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, এক পুরুষ অন্য পুরুষের সতরের দিকে দৃষ্টি দেবে না, এক নারী অন্য নারীর সতর দেখবে না। এক পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই চাদরের নিচে শোবে না। এক নারী অন্য নারীর সঙ্গে একই কাপড়ের নিচে শোবে না (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬০১)।
হজরত আব্দুল মালিক বিন রাবি বিন সাবরাহ পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, যখন সন্তানের বয়স সাত বছর হয়, তখন তার বিছানা আলাদা করে দাও (সুনানে দারা কুতনি : ৮৮৬, মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন : ৭২১)।
মন্তব্য করুন