মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, রোগ-ব্যাধি, ক্ষতি কিংবা বিপদ-আপদ—এসবই আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা। কখনো শরীরের অসুস্থতা দিয়ে, কখনো জীবনের সংকট বা সম্পদের ক্ষতি দিয়ে তিনি বান্দাকে পরীক্ষা নেন। একজন মুমিন হিসেবে এসব পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে আল্লাহর হুকুম মেনে চলা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করাই হলো প্রকৃত সফলতার উপায়।
তবে বাস্তব জীবনে আমরা অনেক সময় এমন কিছু অদৃশ্য সমস্যার মুখোমুখি হই, যা চিকিৎসা বা দুনিয়াবি উপায়ে সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না। এর মধ্যে অন্যতম হলো বদনজর এবং কালো জাদু। হিংসা-ঈর্ষা থেকে মানুষের দৃষ্টির আঘাত বা বদনজর যেমন বাস্তব, তেমনি কারও ক্ষতি সাধনে কালো জাদু করার বিষয়টিও সত্য এবং তা ইসলামে গুরুতর গোনাহের অন্তর্ভুক্ত।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, বদনজর লাগা সত্য (আবু দাউদ : ৩৮৭৯)
অন্যদিকে খোদ নবীজি (সা.) জাদু করার মতো ধ্বংসকারী কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। বোখারি শরিফের এক হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ৭টি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। এ কথা শুনে সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরিক করা, জাদু, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা (যা আল্লাহ হারাম করেছেন), সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা এবং সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া। (বোখারি : ২৫৭৮)
তবে কেউ যদি জাদুটোনা অথবা বদনজরের শিকার হয় কিংবা এর থেকে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে এসবের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার আমলের কথাও হাদিসে এসেছে।
চলুন, জেনে নিই বদনজর ও কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার ৫ আমল—
এক. উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি তিনবার নিচের দোয়াটি পাঠ করবে, কোনোকিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। দোয়াটি হলো, بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা-ইয়াদুররু মাআস্মিহি শাইয়্যিন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া-হুয়াস-সামিউল আলিম।
অর্থ : আমি আল্লাহর নাম নিচ্ছি। জমিন ও আসমানের কোনোকিছুই যাঁর নামের বরকতে ক্ষতি সাধন করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (তিরমিজি : ৩৩৮৮)
দুই. সকাল সন্ধ্যার আরেকটি দোয়া أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিনশাররি মা খালাকা।
অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর অসিলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার মন্দ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এই দোয়াটি সন্ধ্যার সময় পড়লে ওই রাতে কোনো সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদি কষ্ট দিতে পারে না। (তিরমিজি : ৩৪৩৭)
আরও পড়ুন : অজু শেষে যে দোয়া পড়লে জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে যায়
আরও পড়ুন : ৪০ দিন আগেই কি মানুষ নিজের মৃত্যুর কথা বুঝতে পারে?
তিন. জাদু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে জিবরাইল আলাইহিস সালাম নবীজিকে (সা.) এই দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়েছিলেন। بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিন কুল্লি শাইয়্যিন ইয়্যুজিকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হা-সিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।
অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি, সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (মুসলিম ২১৮৬, তিরমিজি ৯৭২)
চার. সুরা ফালাক ও নাস এক্ষেত্রে অনেক বেশি উপকারী। সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিন বার করে পড়ার পরামর্শ দেন আলেমগণ।
পাঁচ. সুরা ফাতেহার অপর নাম হলো সুরা শিফা অর্থাৎ আরোগ্য লাভের সুরা। এই সুরাও পড়া যেতে পারে।
মন্তব্য করুন