আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদতের জন্য। আর ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম রূপ হলো নামাজ। প্রত্যেক মুসলমানের ওপর এই নামাজ ফরজ করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আমার স্মরণোদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম করো’ (সুরা ত্বহা : ১৪)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম কর এবং ফজরের নামাজ (কায়েম কর)। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৭৮)
রাব্বুল আলামিন আরও বলছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)। অর্থাৎ, প্রকৃত নামাজি সব ধরনের অশ্লীলতা ও অনৈতিকতা থেকে নিজেকে দূরে রাখেন।
তাই পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলোর মধ্যে নামাজের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। আর নামাজের মর্যাদা যেমন বেশি, তেমনই নামাজি ব্যক্তির মর্যাদাও বেশি। এ ক্ষেত্রে অনেকেই জানতে চান, ‘নামাজ আদায় না করলে ব্যক্তির অন্যান্য আমল কবুল হবে কি?’
এ বিষয়ে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইচ্ছেকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি সালাত আদায় না করলে তিনি ইসলামের মধ্যে থাকছেন নাকি খারিজ হয়ে যাচ্ছেন, এটির ওপর নির্ভর করবে তার ‘অন্যান্য আমলগুলো কবুল হবে কি না’- এই প্রশ্নের উত্তর।
তিনি জানান, হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের সঙ্গে অমুসলিমদের পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগের বিষয়টি। অর্থাৎ কেউ সালাত ত্যাগ করলে সে কুফুরি করল (মুসলিম)। অন্যদিকে উমর (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। (তিরমিজি)
এসব হাদিসের ভিত্তিতে অনেক ইমামদের মতে, ইচ্ছেকৃত নামাজ না পড়লে ব্যক্তি আসলে মুসলিম থাকেন না। তারা বলেন, আর যদি কেউ মুসলিমই না থাকে, তাহলে এমনিতেই তো তার অন্য কোনো আমল আল্লাহর কাছে কাউন্ট হবে না, গণ্য হবে না এবং তার অ্যাকাউন্টে যোগ হবে না। অর্থাৎ তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, নামাজ পরিত্যাগকারী ব্যক্তির অন্য কোনো আমল কাজে আসবে না।
তবে ইমাম আ’জম আবু হানিফাসহ (রাহি.) একাধিক ইমামের মতে, যদি কেউ সালাত আদায় না করেন কিন্তু তার মাঝে অপরাধবোধটা থাকে যে, ‘আমি ভুল করছি, আমার সালাত আদায় করা উচিত’— তাহলে সে ব্যক্তি ইসলাম থেকে খারিজ হবেন না। তিনি কাফের হবে না। কারণ, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন না। তবে সালাত আদায় না করে তিনি অনেক বড় ধরনের অপরাধ করছেন, ইসলামের একটি রুকনকে ছেড়ে দিচ্ছেন, অবশ্যই এটা কুফুরি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। হ্যাঁ, এই কুফুরি তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেবে না।
আহমাদুল্লাহ বলেন, এই মত অনুযায়ী সালাত আদায় না করলেও অন্তরে অপরাধবোধ থাকলে ব্যক্তির অন্যান্য আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। অর্থাৎ, কেউ যদি মাঝে মাঝে নামাজ না পড়েন, কিন্তু দান-সদকা করেন, সিয়াম পালন করেন, তাহলে তার এই আমলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে না।
আহমাদুল্লাহ বলেন, তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একজন মানুষের মাঝে যদি মূল জিনিসটাই না থাকে (সালাত), তবে শাখাগত অনেক বিষয় থাকলে সেগুলো তেমন কোনো মূল্য রাখে না। ধরুন, আপনি তরকারি রান্না করবেন, এই তরকারির মূল উপাদান হচ্ছে সবজি। এখন যদি আপনার কাছে লবণ থাকে, পানি থাকে, মরিচ থাকে, তেল থাকে কিন্তু সবজি থাকে না, তাহলে তরকারি রান্না করতে পারবেন না। অতএব ইসলামের মূল বিষয় (ইমানের পর) সালাত যদি আপনার মাঝে না থাকে, তাহলে তো অন্য আমলগুলো কবুল হলেই কী, না হলেই কী— এই পর্যায়ে চলে যায়।
মন্তব্য করুন