রমজান মাসে নাজিল হয়েছে পবিত্র আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। এ মহিমান্বিত মাসটি ইবাদতের মাস। রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয় শিকলে। খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো।
তাহলে প্রশ্ন জাগে, রমজান মাসে শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকলে মানুষ রমজানে পাপ করে কীভাবে? এর বেশকিছু জবাব দিয়েছেন হাদিস বিশারদরা।
আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহে রমজান শুরু হলে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শিকলবন্দি করা হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়’। (বুখারী, মুসলিম)
হাদিস বিশারদরা বলছেন...
১. কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই হতে পারে। রূপক অর্থে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এ অর্থে উল্লিখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। (ইকমালুল মুলিম : ৪/৬)
আর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে এ হাদিসের অর্থ হলো, মানুষ পাপ করে দুই কারণে—
- তার কুপ্রবৃত্তি ও বদ-অভ্যাসের কারণে
- শয়তানের প্ররোচনায়
রমজানে শয়তান বন্দি থাকলেও কুপ্রবৃত্তির কারণে মানুষ পাপ করে থাকে। (ফাতহুল বারি: ৪/১১৪)
২. আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, শয়তানকে ওই সব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ না-ও রাখা হতে পারে। (উমদাতুল কারি : ১০/২৭০)
৩. রমজানের আগে কৃত পাপের প্রভাবে মানুষ পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘক্ষণ আগুনে রাখার পর তা থেকে বের করা হলেও বেশ কিছুক্ষণ তার প্রভাব বাকি থাকে, একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছুদূর পর্যন্ত চলতে থাকে; ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারও কারও কাছ থেকে পাপ হয়ে থাকে।
৪. মহান আল্লাহ কোরআনের সুরা নাসে বান্দাদের মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান উভয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে, যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। রমজানে জিন শয়তানকে বন্দি রাখা হলেও মানুষরূপী শয়তানদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
৫. কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, অতিরিক্ত দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)
৬. কারও কারও মতে, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপ করে।
এদিকে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বোখারি শরিফের একটি হাদিসে বলা হয়েছে, একদিন এক বেদুইন নবী (সা.) এর কাছে এসে বলল, ‘আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন, যা করলে আমি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারি’।
নবী (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করো না, ফরজ নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো এবং রমজান মাসের রোজা রাখো’। লোকটি বলল, ‘আল্লাহর শপথ! আমি এর চেয়ে বেশি কিছু করব না’। যখন লোকটি ফিরে গেল তখন নবী (সা.) বললেন ‘বেহেশতি লোক দেখার যার ইচ্ছা, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে’।
সাহাল ইবনে সাআ’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন- ‘বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। এগুলোর একটির নাম রায়্যান। এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন’।
মন্তব্য করুন