মুমিন জীবনে বরকত ও কল্যাণ বয়ে আসে রমজান। এ মাসে মানুষ আল্লাহর আরও বেশি ঘনিষ্ঠ ও কাছের হয়। মহান আল্লাহ এ মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন।
মুমিনদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য এক অনন্য সেরা মহিমান্বিত মাসটি ইবাদতের মাস রমজান। এ মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয় শিকলে। খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো।
রমজান মাসের দ্বতীয় ১০ দিন মাগফেরাতের। যদিও রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতদের উদ্দেশে বলেন, রমজান পুরোটাই বরকত আর বরকত। এই মাসে অতীতের সব পাপ ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে। দ্বতীয় দশকে ফরজ আমলের পাশাপাশি বিশেষভাবে কতগুলো আমল করেছিলেন নবীজি।
মাগফেরাতের দশকে আল্লাহর কাছে প্রত্যেক মুমিনের বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর: ৩১)
দিনে রোজা রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে তাহাজ্জুত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তারাবি রমজানে বিশেষ ইবাদত। ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ৩৬, খণ্ড ১)
ইফতার করানোর সওয়াব সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭; ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬; ইবনে হিব্বান: ৮/২১৬; সহিহ আল-জামে: ৬৪১৫)
পবিত্র রমজানে দান-সদকার সওয়াব ও মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত..।’ (বুখারি: ০৬; মুসলিম: ২৩০৮; মুসনাদে আহমদ: ২৬১৬)।
মাগফেরাতের দশকে গুনাহ মাফের দোয়াগুলো বেশি পরিমাণে করা উচিত। যেমন এই দোয়াটি মাগফেরাতের দশকে সর্বাবস্থায় পাঠ করা উচিত ‘আসতাগফিরুল্লাহ রব্বি মিন কুল্লি যামবিন ওয়াতুবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আমার প্রভু আল্লাহর কাছে আমার সমুদয় পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।’
এক. ‘রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা আমাদের প্রাণের ওপর অত্যাচার করেছি আর তুমি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না কর ও আমাদের প্রতি কৃপা না কর তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা আরাফ: ২৩)
দুই. ‘লা ইল্লাম ইয়ারহামনা রাব্বুনা ওয়া ইয়াগফির লানা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ অর্থ: ‘আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর যদি কৃপা না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা আরাফ: ১৪৯)
তিন. ‘রাব্বানা মা খালাকতা হাজা বাতিলাং সুবহানাকা ফাকিনা আজাবান নার।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি এ বিশ্বজগতকে বৃথা সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। সুতরাং তুমি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা ইমরান: আয়াত ১৯১)।
চার. ‘সামি’না ওয়া আতানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।’ অর্থ: ‘আমরা (আল্লাহ তাআলার আদেশ) শুনলাম ও মানলাম, হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! আমরা তোমারই কাছে ক্ষমা চাই আর তোমারই দিকে সবার ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা: ২৮৫)।
মন্তব্য করুন