গত জুলাইয়ে আফগানিস্তান সিরিজের মাঝপথে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুড বাই জানান তামিম ইকবাল। যা ছিল দেশের ক্রিকেটে বহুল আলোচিত ঘটনা। উদ্ভূত সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তামিম ইস্যু সুরাহা করতে এগিয়ে আসতে হয়েছিল দেশের ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি ও বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। নড়াইল এক্সপ্রেসের উদ্যোগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে ক্রিকেটে ফিরে আসেন তামিম।
আগামীকাল ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মজার ও দুঃখের বিষয় হলো, এখনো বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করতে পারেনি বিসিবি। বরং তার আগে তেতে উঠেছে তামিম-সাকিব ইস্যু। যে ইস্যুতে নড়বড়ে অবস্থান বিসিবির। এখানেও এই ইস্যু সমাধানে মাশরাফির শরণাপন্ন হতে হয়েছে বিসিবির।
মঙ্গলবার মিরপুরে যখন বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার তৃতীয় ওয়ানডে চলছে, বেলা ২টার দিকে বিসিবিতে মাশরাফির আগমন। যতটুকু জানা গেছে, তামিম-সাকিব ইস্যুতে বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মাশরাফি। আসলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা কি সাকিবের, না তামিমের, নাকি হেড কোচ হাথুরুসিংহের। নিউজিল্যান্ড সিরিজের মধ্যেই তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শোনা যাচ্ছে, বিশ্বকাপ স্কোয়াড থাকলেও সরে দাঁড়াতে পারেন তামিম। কারণটি স্পষ্ট, আনফিট তামিমকে নাকি বিশ্বকাপ দলে রাখতে নারাজ সাকিব ও হাথুরু।
ইনজুরির সঙ্গে তামিমের লড়াই বেশ পুরোনো। অভিমান ভেঙে ক্রিকেটে ফিরলেও মাঝে এশিয়া কাপ খেলা হয়নি তার। ছিলেন ইনজুরি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায়। নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরেই দ্বিতীয় ম্যাচে তামিম খেলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস। ম্যাচের পর জানিয়েছিলেন, পিঠের পুরোনো চোট ভোগাচ্ছে তাকে। ব্যাটিংয়ের শুরুতে নার্ভাসও ছিলেন তিনি।
পরের অধ্যায় আরও স্পর্শকাতর। দেশের একটি গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, তামিম নাকি বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণ ফিট নন। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকলেও তিনি বড়জোর পাঁচটি ম্যাচ খেলতে পারবেন। কেন জানি মনে হচ্ছে, ৫ ম্যাচ খেলতে চাওয়ার কথা তামিম বলেননি। কারণ, সেটা বলার বাস্তবতাই নেই। কারণ কোনো প্লেয়ার ইনজুরিতে থাকলে তার সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল টিম। কিংবা বিসিবি। নির্দিষ্ট করে ম্যাচ খেলার কথা বলতে পারে না কোনো প্লেয়ার।
তামিম নিজের অবস্থানের কথা হয়তো স্পষ্ট করেছেন। নিজের অস্বস্তির জায়গা তুলে ধরতে চেয়েছেন। কারণ পিঠের ব্যথার কারণে সম্প্রতি লন্ডন থেকে ইনজেকশন নিয়ে এসেছেন তিনি। যা ব্যথানাশক। এটা যে হুট করে মাথাচাড়া দেবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।
এ নিয়ে গত রাতে বিসিবির সভাপতি নাজুমল হাসান পাপনের বাসায় নাকি বৈঠক হয়েছে সাকিব আল হাসান ও হাথুরুসিংহের। তিনজনের এই বৈঠকে সাকিব বলেছেন, আনফিট খেলোয়াড় দলে থাকলে বিশ্বকাপে নেতৃত্বই দেবেন না তিনি। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে টাইগার ক্যাম্পে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি বেশ পুরোনো। কারও কারও এমনও মত, তামিম হয়তো আশঙ্কা করছেন, সাকিবের অধীনে তিনি দলে স্বস্তিতে থাকবেন না। আবার কেউ বলছেন, অধিনায়ক সাকিবকে অস্বস্তিতে রাখতেই বিশ্বকাপের আগে নিজের চোটকে আবারও টালমাটালভাবে উপস্থাপন করছেন তামিম।
সব মিলিয়ে এমন অবস্থায় সামনে কী সিদ্ধান্ত আসতে চলেছে তা বলা মুশকিল। মাশরাফি যেহেতু বৈঠক করে গেছেন, হয়তো কোনো সুরাহা হতে পারে। কিংবা বরাবরের মতো অভিমানী তামিম যদি পাকা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তাতেও হয়তো অবাক করার মতো কিছু থাকবে না। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক আসরের আগে দলে এমন জগাখিচুরী অবস্থার জন্য নিজেদের দায় কোনোমতেই এড়াতে পারে না বিসিবি।