ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার মধ্যে বিশ্বকাপ আসলেই যেন অন্য রূপে ভর করে। ২০১৯ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানের মালিক প্রথম ম্যাচে নিস্প্রভ থাকার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিরলেন পুরোনো হিটম্যান রূপে। রোহিত বুধবার (১১ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে নিজের করে নিলেন আরও একগুচ্ছ রেকর্ড। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কা, বিশ্বকাপে ভারতের দ্রুততম সেঞ্চুরি—প্রত্যেকটি রেকর্ড এখন ভারতের হিটম্যানের।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিকের রেকর্ডের দিনে স্রেফ উড়ে গেছে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে ৮ উইকেটে ২৭২ রান করেছিল আফগানরা। রোহিত-ঝড়ে রানটা ১৫ ওভার ও ৮ উইকেট হাতে রেখে টপকে গিয়ে এবারের বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে টপ ফেভারিট ভারত।
রানতাড়ায় শুরু থেকেই ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত ছিলেন খুনে মেজাজে। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে তিনি ৫০ ওভারের ম্যাচকেও যেন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পরিণত করেন! ৩০ বলে ফিফটি হাঁকানোর পর তিনি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মাত্র ৬৩ বলে। ফলে মাত্র ১০ ওভারেই কোনো উইকেট না হারিয়ে ভারত তোলে ৯৪ রান। একদিকে রোহিত মারমুখী মেজাজে, অন্যপ্রান্তে ইশান কিষাণ খেলেছেন ধীরস্থির ইনিংস। তাদের ওপেনিং জুটি ভাঙে ১৫৬ রানে। ইশান কিষাণ অল্পের জন্য অর্ধশতক হাতছাড়া করেছেন।
রশিদ খানের করা গুগলি বলটিকে স্কুপ করতে গিয়ে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এর আগে ৪৭ বলে ৫টি চার ও দুই ছক্কায় কিষাণ করেছেন ৪৭ রান। ১৮.৫ ওভারেই ১৫৬ রান করা ভারতের জন্য ম্যাচ জেতাটা কোনো বিষয়ই ছিল না। কেননা সেঞ্চুরি হাঁকানো রোহিতের ব্যাটের ধার যে তখনও কমেনি। এদিন তিনিও আউট হয়েছেন রশিদের বলে। তবে রশিদ এর আগে বোলিংয়ে আসলেন না— তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ আক্রমণে থাকা মুজিব-উর-রহমান, ফজলহক ফারুকি ও নাভিন-উল হকদের বল একের পর এক সীমানাছাড়া করেছেন রোহিত।
২৬তম ওভারে আফগান লেগ-স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প উপড়ে যায় রোহিতের। এর আগে তিনি ১৬টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ভারত অধিনায়ক ১৩১ রানের (৮৪ বল) ইনিংস খেলেন। তিনি এখন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৭টি সেঞ্চুরির মালিক। যার মাধ্যমে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন স্বদেশি কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারকে। এছাড়া ছয়ের দিক থেকে টপকে গেছেন ক্রিস গেইলকে। এতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গেইলের সর্বোচ্চ ৫৫৩টি ছয়ের রেকর্ড ছিল।
রোহিত ফিরলেও ভারতের জন্য চিন্তার কোনো সুযোগই ছিল না। ক্রিজে নামা কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়াররা বাকি পথ সামলেছেন ঠাণ্ডা মাথায়। ৬টি চারের বাউন্ডারিতে কোহলি ৫৫ (৫৬ বল) এবং একটি করে চার-ছক্কায় আইয়ার ২৫ রান (২৩ বল) করেছেন।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৩২ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। ৭ম ওভারে ইব্রাহিম জাদরানকে ২১ রানে ফেরান বুমরাহ। দলীয় ৬৩ রানের মাথায় গুরবাজ ও রহমত শাহকে হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানরা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১২১ রান যোগ করেন অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। দলীয় ১৮৪ রানে এ জুটি ভাঙেন পেস অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে ৬২ রানে ফেরেন আজমাতুল্লাহ।
বিপদের মাঝে বুক চেতিয়ে লড়াই চালিয়ে যান আফগান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদি। ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি তুলে ৮০ রানে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। বাঁহাতি চায়নাম্যান কুলদ্বীপ যাদব লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আফগান অধিনায়ককে। ৪ রানের ব্যবধানে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ফেরান বুমরাহ। মোহাম্মদ নবীকেও ১৯ রানে ফেরান ভারতীয় পেসার। শেষের দিকে রশিদ-মুজিব দৃঢ়তায় ২৭২ রানের পুঁজি পায় আফগানিস্তান।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন জাসপ্রীত বুমরাহ। ৩টি উইকেট শিকার নেন হার্দিক পান্ডিয়া। এছাড়া কুলদ্বীপ যাদব ও শার্দুল ঠাকুর একটি করে উইকেট শিকার করেন।
মন্তব্য করুন