

ইংলিশ ফুটবল জায়ান্ট লিভারপুলে এখন উত্তাল পরিস্থিতি। মাঠের ব্যর্থতা, নতুন কোচ আর্নে স্লটের কৌশলগত সিদ্ধান্ত, আর দলের সেরা তারকা মোহাম্মদ সালাহর ক্ষোভ মিলিয়ে অ্যানফিল্ডে সৃষ্টি হয়েছে এক অভ্যন্তরীণ সংঘাত, যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে ড্রেসিং রুমে এবং ক্লাব ব্যবস্থাপনায়।
“আমাকে বিশ্বাসঘাতকতার মতো লাগছে”—সালাহর বিস্ফোরণ
লিডস ইউনাইটেডের সঙ্গে ৩–৩ ড্রয়ের ম্যাচে এক মিনিটও না খেলায় ম্যাচ শেষে ক্ষোভ উগরে দেন সালাহ। গণমাধ্যমে তিনি সরাসরি বলেন, “এটা অগ্রহণযোগ্য। ক্লাবের জন্য আমি এত কিছু করেছি। প্রতিদিন জায়গা পেতে লড়তে হবে—এটা হওয়া উচিত নয়। মনে হচ্ছে আমাকে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে।”
৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড আরও বলেন, তার সঙ্গে কোচের সম্পর্ক হঠাৎ বদলে গেছে এবং ক্লাবের ভেতরে কেউ তাকে আর চাইছে না বলে তার মনে হচ্ছে।
এই উত্তপ্ত মন্তব্যের পরই আর্নে স্লট কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সালাহকে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ স্কোয়াডে রাখেননি। কিন্তু মালিকপক্ষ ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ স্লটের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
সালাহর ভবিষ্যৎ এখন ঝুলে আছে অদৃশ্য সুতোয়
শনিবার ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচের পর ১৫ ডিসেম্বর তিনি জাতীয় দলে যোগ দেবেন আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে খেলার জন্য। নিজেই বলেছেন, “সমর্থকদের বিদায় জানাব, এরপর কী হবে জানি না। এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
এদিকে তার মাঠের পারফরম্যান্সও আগের মতো নেই। এ মৌসুমে গোল মাত্র পাঁচটি, যা তার মানের তুলনায় কম। সাম্প্রতিক চার ম্যাচে মাত্র একটিতে বদলি হিসেবে খেলেছেন।
বোর্ড বলছে—এটা কেবল কোচের কৌশলগত সিদ্ধান্ত
দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, সালাহর মন্তব্যে ক্লাব বিভ্রান্ত হয়নি, তবে এত প্রকাশ্য আক্রমণ তারা আশা করেনি।
বোর্ডের মতে,
আরো বিস্ময়ের বিষয়—ক্লাবের ভেতর অনেকে মনে করছে, সালাহ ইচ্ছাকৃতভাবে কোচকে অস্থির করতে এমন মন্তব্য করেছেন, যাতে স্লটের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
কিন্তু মালিকপক্ষ সম্পূর্ণভাবে কোচের পাশে আছে। লিগে ১০ম স্থানে থাকা, লিগ কাপ থেকে আগেই ছিটকে যাওয়া—এসব ব্যর্থতার মাঝেও স্লটকে সরানোর কোনো পরিকল্পনা নেই ক্লাবের।
ড্রেসিং রুমের প্রতিক্রিয়া—শান্ত কিন্তু দূরত্ব আছে
দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা সালাহর প্রতি সম্মান রেখেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—এটা ক্লাব ও সালাহর মধ্যকার বিষয়।
ক্যাপ্টেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক বলেছেন, “এ ধরনের ব্যাপার ঘরের ভেতরেই থাকা উচিত। আমরা লিভারপুলের জন্য একসঙ্গে লড়ব।”
অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার আরও সরাসরি মন্তব্য করেন, “মো কী অবস্থায় আছে সেটা আমরা জানি। কিন্তু সব কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি বড় মানুষ, তার সিদ্ধান্ত তিনিই নেওয়ার দায়িত্বে। দল অবশ্যই ক্লাবের পাশে আছে।”
কীভাবে শুরু হলো এই ভাঙন?
মাত্র ছয় মাস আগেও পরিস্থিতি ছিল একেবারে উল্টো।
তারপরই এলো ধাক্কাগুলো—
সালাহ তার আগের পার্টনারশিপ হারালেন এবং নতুন স্টাইলে মানিয়ে নিতে পারছেন না
দলের ফর্মও ধসে পড়ে—লিগে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা অঞ্চলের বাইরে।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
সালাহর চুক্তি ২০২৭ পর্যন্ত থাকলেও জানুয়ারির পর তিনি লিভারপুলে থাকবেন কি না, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেছে।
২০২৩ সালে আল-ইত্তিহাদ ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা লিভারপুল ফিরিয়ে দেয়। এবার সৌদি ক্লাবগুলোর আগ্রহ আরও বেড়েছে, পাশাপাশি এমএলএসও তাকে দলে চায়।
সব মিলিয়ে জানুয়ারির জানালা এখন সালাহর ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন