কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছরের আরাধ্য শিরোপা জেতান লিওনেল মেসি-অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ারা। সোনালি ট্রফি জয়ের পর আর্জেন্টাইন অধিনায়ক জানিয়েছিলেন ‘থ্রি স্টার’ জার্সিতে খেলার অনুভূতি নিতে চান। মেসির মতো আরেক তারকা ডি মারিয়া জানিয়ে দিয়েছেন ২০২৪ কোপা আমেরিকার পর ফুটবলকে বিদায় জানানোর। তবে মেসি-মারিয়াদের মতো সিনিয়ররা অবসরে গেলে তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের দায়িত্ব সামলাবেন কারা?
ফ্রান্সকে হারিয়ে আলবিসেলেস্তেদের শিরোপা জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৩৫ বছরের মেসি। এলএমটেন এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করেন অভিজ্ঞ ডি মারিয়া, নিকোলাস ওতামেন্ডি, মার্কাস আকুইনা, পাপ্পু গোমেজ, জার্মান পেজ্জেলারা। তাদের সাহায্যে নিজেদের বিলিয়ে দেন তরুণ তুর্কী এনজো ফার্নান্দেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, হুলিয়ান আলভারেজ, পাওলো দিবালা, নেহুয়েল মলিনা, লিসান্দ্রো মার্টিনেজরা। তাদের সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছেন আলেহান্দ্রো গার্নাচো, অ্যাঞ্জেল কোরেয়া, নিকোলাস গঞ্জালেস, মন্টিয়েলরা।
ভবিষ্যতে মেসি-মারিয়াবিহীন আর্জেন্টিনার দায়িত্ব যারা নেবেন তারা হলেন-
হুলিয়ান আলভারেজ: কাতার বিশ্বকাপে নিজের প্রতিভার দারুণ পরিচয় দিয়েছেন ম্যানসিটি আর্জেন্টাই ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজ। প্রতিযোগিতায় ৪টি গোল করেন ২৩ বছর বয়সী তারকা। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো একটি গোল করেন তিনি। মেসিদের অবসরের পর দলের প্রধান তারকা হওয়ার সবকিছুই বিদ্যমান ম্যানসিটি ফরোয়ার্ডের।
পাওলো দিবালা: আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে লিওনেল মেসি ও পাওলো দিবালার খেলার ধরন প্রায়ই এক। যে কারণে বেশিরভাগ সময়ে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে কাটাতে হয়েছে রোমা তারকাকে। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও পর্যাপ্ত সময় পাননি ৩০ বছর বয়সী ফুটবলার। কারণ মেসিকে বসিয়ে দিবালাকে নামানোর ভরসা পায়নি আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। তবে মেসি-মারিয়াদের অবসরের পর নিশ্চিতভাবে আক্রমণ ভাগের দায়িত্ব নিতে হবে দিবালাকে।
লাউতারো মার্টিনেজ: ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ইন্টার মিলানের অধিনায়ক লাউতারো মার্টিনেজ। প্রতিনিয়ত গোল করে ইতালিয়ান জায়ান্টদের আনন্দে ভাসাচ্ছেন ২৬ বছর বয়সী তারকা। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৫৪ ম্যাচে ২১টি গোলও রয়েছে লাউতারোর। অভিজ্ঞরা অবসরে গেলে তাদের শূন্যস্থান পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন ইন্টার অধিনায়ক।
এনজো ফার্নান্দেজ: আর্জেন্টিনার মধ্যমাঠ নিয়ন্ত্রনের অন্যতম কারিগর কাতার বিশ্বকাপের সেরা তরুণ ফুটবলার এনজো ফার্নান্দেজ। আলবিসেলেস্তেদের শিরোপা জয়ের তার অবদান ছিল অপরিসীম। বিশ্বকাপের আগে মধ্যমাঠের মূল তারকা জিওভানি লো সেলসোর ইনজুরিতে চিন্তায় পড়েন কোচ স্কালোনি। তবে নিজের প্রতিভার সম্পূর্ণ ব্যবহার করেন এনজো ফার্নান্দেজ।
অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার: আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডের অন্যতম কারিগর লিভারপুলের ম্যাক অ্যালিস্টার। ডি পল ও এনজো ফার্নান্দেজের সঙ্গে দুর্দান্ত রসায়নে মধ্যমাঠ নিয়ন্ত্রন করেন ২৪ বছর বয়সী অ্যালিস্টার। বিশ্বকাপের শেষে ব্রাইটন থেকে ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুলের তাঁবুতে ভেড়েন এই আর্জেন্টাইন। অনাগত দিনে আর্জেন্টাইনদের ভরসার প্রতিদান দিবেন এই মিডফিল্ডার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
জিওভানি লো সেলসো: কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বড় আক্ষেপের নাম ছিল লো সেলসো ইনজুরি। যার জন্য বিশ্বমঞ্চে দর্শক সারিতে বসে দেখতে হয় মেসি-মারিয়াদের শিরোপা উৎসব। তবে ইনজুরি থেকে ফিরে এসে আবারও দলের অন্যতম ভরসার নাম লো সেলসো। দলের সিনিয়র ফুটবলারদের বিদায়ের পর দায়িত্বটা আরও বেড়ে যাবে এই মিডফিল্ডারের।
ক্রিশ্চিয়ান রোমারো: দীর্ঘদিন আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইনের প্রধান অস্ত্র ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্ডি। কাতার বিশ্বকোপে লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, নেহুয়ের মলিনা ও ক্রিশ্চিয়ান রোমারোকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন দুর্ভেদ্য রক্ষণ দেওয়াল। নিশ্চিত ভাবে অভিজ্ঞ ওতামেন্ডির বিদায়ের পর রক্ষণের মূল দায়িত্ব পড়বে ক্রিশ্চিয়ান রোমারোর ওপর। তাকে পরিপূর্ণ সহায়তা দিবে মলিনা, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, লুকাস মার্টিনেজ কুয়ার্তাদের মতো তরুণ ডিফেন্ডাররা।
মন্তব্য করুন