মহাকাব্যের মহানায়ক লিওনেল মেসি। মহাকাব্য ঠিক এমনই হয়। ঠিক এমনই। যেমন করে একটা মহাকাব্যে থাকে ট্র্যাজেডি, দুঃখ, না পাওয়ার বেদনা অবশেষে আনন্দ। মিলিয়ে নিতে পারেন। সাহিত্যে মহানায়কের সংজ্ঞায় যে গুণগুলো থাকা দরকার আর্জেন্টাইন অধিনায়করে মধ্যে কোন জিনিসটা কমতি আছে?
রোজারিওর সেই ছোট্ট মেসি। যাকে কিনা হরমোন সমস্যার জন্য ছোটবেলায় থেমেই যেতে হতো। তবে কেউ কি জানত, সেই মেসিই একদিন পাবে অমরত্ব, হবেন সর্বকালের সেরাদের একজন। অদম্যরা কখনো দমে যান না। অদম্যরা ইতিহাস গড়েন। স্বর্গের সঙ্গে মিতালি করার ইতিহাস। মেসি তাদেরই একজন।
২০১৪ সালের কথা। সব পাওয়া মেসি না পাওয়া বিশ্বকাপের খুব কাছাকাছি। তবে ঈশ্বর যে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। শেষ মুহূর্তের ঝোড়ো হাওয়ায় লন্ডভন্ড হলো সব। সবাই বললো দেশের জার্সিতে অপয়া মেসি। কোনদিনই দেশকে কিছু দিতে পারবেন না। মেসি আর্জেন্টিনার নন মেসি বার্সেলোনার।
মেসি রোবট নন রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তাইতো তারও অভিমান আছে, রাগ আছে আছে ক্ষোভ। না পাওয়ার কষ্ট নিতে পারেন নাই মেসি। তাই অবসর নিয়েছিলেন আকাশি-নীল শিবির থেকে। নানা চড়াই-উতরাই পার করে আবারও ফিরেছেন। কারণ তিনি জানতেন তিনি পারবেন। পারবেন অমর হতে। মহাকাব্যের মহানায়ক হতে। মেসি এলেন দেখলেন জয় করলেন।
মারাকানা থেকে লুসাইল স্টেডিয়াম। সময়ের ব্যবধান আট বছর আর দূরত্বে আট হাজার মাইল। মারাকানায় কেঁদেছিলেন মেসি, সতীর্থ, কিংবা গ্যালারি ভর্তি সমর্থক। সাথে ছিলো বিশ্বের আনাচে কানাচে আর্জেনিটনার কোটি ভক্ত। লুসাইলেও কেঁদেছেন সবাই। তবে কান্নার রঙটা ছিল আলাদা। আর্জেন্টিনার ছত্রিশ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর সুখের কান্না। গন্ধটা ছিলো প্রাপ্তির। লিওনেল মেসির প্রাপ্তির।
লুসাইলে ১৮ ডিসেম্বর মেসি পেয়েছেন অমরত্ব। তবে তিনি একা নন। যারা জীবনে একবারের জন্য হলেও মেসি নামের আবেগে ভেসেছে, একবারের জন্য হলেও মেসির ওই কান্নায় আক্ষেপের অনলে পুড়েছে, না পাওয়ার হাহাকার করেছে সেই কোটি মানুষও জিতেছেন। গেলো ৩৬৫ দিনে অসংখ্য প্রহর জানিয়ে দিয়ে যায়, মেসি কেবল একা জিতেননি কোটি মানুষ জিতেছে এক মেসিতে।
মন্তব্য করুন