হয়তো প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন দাবাকে—তাই তো দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন দাবা খেলতে খেলতেই। গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪৮তম জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিলেন আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের। পল্টনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) ভবনে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের কক্ষে শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল ৩টায় খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে অস্বস্তিবোধ করেন জিয়াউর রহমান।
অ্যাসোসিয়েশন অব চেস প্লেয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শওকত বিন ওসমান শাওন কালবেলাকে বলেন ৫টা ৫২ মিনিটের দিকে খেলতে খেলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জিয়াউর রহমান।
১২তম রাউন্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী এনামুল হক রাজীবের গাড়িতে দ্রুত রাজধানীর শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১৫ মিনিট চেষ্টার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর।
মৃত্যুকালে স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন দেশের তারকা এই দাবাড়ু। হাসপাতালে স্ত্রী তাসমিনা সুলতানা লাবন্য কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আপনার জিয়া ভাই আর নেই। ওকে আর বাঁচানো গেল না।’
বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের প্রধান বিচারক হারুনুর রশিদ ঘটনাস্থলে ছিলেন। এ ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘জিয়া খেলতে খেলতে চেয়ার থেকে পড়ে যান। তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও বাঁচানো যায়নি। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার জ্ঞান ফেরাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মৃত ঘোষণা করেছেন।’
হাসপাতালে ভিড় করেন সতীর্থরা। আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব বলেন, ‘হাসপাতালে জিয়া ভাইকে আনা হয়েছে অনেক সময় হলো। ডাক্তাররা আগেই মৃত ঘোষণা করেছেন। তবে ভাবির মন তো আর মানছে না।’
১৯৭৪ সালের ১ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তার পিতা পয়গাম উদ্দিন আহমেদ ও মায়ের নাম জেরিন আহমেদ। স্কুল জীবন থেকেই সম্পৃক্ত হয়েছিলেন দাবায়।
নিয়াজ মোর্শেদের পর ২০০২ সালে দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব জেতেন জিয়াউর রহমান। এর আগে ১৯৯৩ সালে জিতেছিলেন আন্তর্জাতিক মাস্টারের খেতাব। ২০২২ সালে ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে একমাত্র ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ইতিহাস গড়েন তিনি।
এ ছাড়া জিয়াউর রহমান জাতীয় দাবাসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রতিযোগিতা জেতেন।
মন্তব্য করুন