কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪০ পিএম
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ৩১ বার তোপধ্বনি কেন?

কামান দাগার মুহূর্ত। ছবি : সংগৃহীত
কামান দাগার মুহূর্ত। ছবি : সংগৃহীত

বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বা বিশেষ দিবসকে তোপধ্বনির (কামান দাগা) মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়। ঐতিহাসিকভাবে সামরিক বাহিনীর এই তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মান জানানোর রেওয়াজ রয়েছে। তোপধ্বনির মাধ্যমে সামরিক অভিবাদনের প্রথাটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত।

তোপধ্বনির সংখ্যার বিষয়টিও এসেছে ঐতিহাসিকভাবে। এটি ব্যক্তি বা ক্ষেত্রবিশেষে কম-বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে তোপধ্বনির মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক অভিবাদন জানানো হয়। দুটি দিনেই ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়।

আবার বাংলাদেশে অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান বা আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী সামরিক সম্মান জানাতে ২১ বারই তোপধ্বনি করার বিষয়টি জানা যায়।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, এই তোপধ্বনি দেওয়ার রীতিটা শুরুটা হয়েছিল চতুর্দশ শতকে। ওই সময় নৌবিদ্যায় পারদর্শীরাই পৃথিবীজুড়ে রাজত্ব করত। ফলে অধিকাংশ যুদ্ধই হতো নৌ-পথে। কোনো যুদ্ধজাহাজে গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে রিলোর্ড করা পর্যন্ত সেটি অসহায় থাকত। এ অবস্থায় জাহাজটি স্থলভাগের সৈনিকদের কামানের গোলার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিত। তাই বিদেশের বন্দরে যখন কোনো যুদ্ধজাহাজ প্রবেশ করে তখন এভাবে তোপধ্বনি দিয়ে তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককেই সম্মান প্রদর্শন করে।

আবার ওই সময় কোনো জাহাজ যখন যুদ্ধের জন্য বন্দর ছেড়ে যেত তখন স্থলভাগ ও জাহাজের ভেতর দুই স্থান মিলিয়ে মোট ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হতো। পরবর্তীতে এই ২১ বারের তোপধ্বনির বিষয়টি একটি চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়। এটি বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে।

৩১ বারের তোপধ্বনির ব্যাখ্যায় জানা যায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে ২১ বার তোপধ্বনি প্রচলন থাকলেও ব্রিটিশ উপনিবেশিক দেশগুলো এই নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন এনে ৩১ বার নির্ধারণ করে। বিষয়টি এমন যে, যখন কোনো যুদ্ধজাহাজ বন্দর বা ঘাঁটি ছেড়ে বের হয় তখন সেই জাহাজ থেকে ৭ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। ঘাঁটিতে বা বন্দরে অর্থাৎ মাটিতে সৈনিকদের যে দল বা ব্যাটারি থাকে তারাও সেই তোপধ্বনির জবাবে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে। জাহাজ থেকে ৭ বার, মাটি থেকে ২১ বার মোট ২৮ বার তোপধ্বনি করার পর জাহাজ থেকে আরও তিনবার তোপধ্বনি করা হয়। সেই অতিরিক্ত তিনটি তোপধ্বনির একটা করা হয় ব্রিটিশ রাজা বা রানির সম্মানে, অন্যটা জাহাজের ক্যাপ্টেনের জন্য এবং শেষটা হচ্ছে ব্রিটিশ বাহিনীর রাজকীয় প্রতিনিধির জন্য।

এদিকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট ছাড়াও ব্রিটিশ ক্রাউন ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলের রাজা বা তার প্রতিনিধিদের শ্রদ্ধা জানাতে তোপধ্বনি প্রথা চালু হয়েছিল।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা গেছে, রাজা, নবাব বা জমিদারদের গুরুত্বভেদে এই তোপধ্বনি নির্ধারণ হতো। কোনো কোনো নবাব বা জমিদারের জন্য কোনো তোপধ্বনি বরাদ্দ ছিল না। একমাত্র বড়লাট বাহাদুরই নির্বাচন করতেন কোন রাজার সম্মানে কত তোপ দাগা হবে। রাজ্যের সমৃদ্ধি, রাজরক্তের কৌলীন্য আর সর্বোপরি ব্রিটিশরাজের প্রতি তাদের আনুগত্যবোধ থেকে তোপধ্বনির সংখ্যা নির্ধারণ হতো। তিনিই তোপধ্বনির সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারতেন। যেমন- হায়দ্রাবাদ, কাশ্মীর, গোয়ালিয়র, মহিশুর এবং বারোদার রাজার বরাদ্দ ছিল ২১ বার তোপধ্বনির সম্মান।

এর ধারাবাহিকতায় কেউ পেত ১৯, কেউ ১৭, কেউ ১৫ কিংবা ৯টি তোপের আখ্যা। আবার কারও অনুকূলে কোনো তোপধ্বনি বরাদ্দই ছিল না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

খামেনির সঙ্গে অশোভন আচরণ বন্ধ করুন, ট্রাম্পকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজ বাড়িতে ইউপি সদস্য ও ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা

ঢাকার আকাশ আজ কেমন থাকবে

ইরানকে আবার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

টিভিতে আজকের খেলা

দুপুরের মধ্যে ৭ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১২ পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে ইরান : আইএইএ

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প সত্যিই আগ্রহী: পুতিন

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১০

মুন্সীগঞ্জে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৪

১১

২৮ জুন : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

ভারতে আরও এস-৪০০ সরবরাহ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা

১৩

‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত অভিনেত্রী আর নেই

১৪

১০ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করল পুলিশ

১৫

২০ হাজার নিমগাছ রোপণের উদ্যোগ ঘোষণা আমিনুল হকের

১৬

শুভ জন্মদিন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

১৭

সকল ইসলামী শক্তির মধ্যে সমঝোতা হতে যাচ্ছে : গোলাম পরওয়ার

১৮

মিরপুরে ভাড়াটিয়ার ওপর বাড়িওয়ালার হামলা

১৯

‘তারেক রহমান আওয়ামী ফ্যসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সফল রূপকার’

২০
X