কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:২৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বারবার মহাকাশে গিয়ে কী নিয়ে আসে নাসার এই যান?

আমেরিকার বায়ুসেনার রহস্যময় মহাকাশযান এক্স-৩৭বি। ছবি : সংগৃহীত
আমেরিকার বায়ুসেনার রহস্যময় মহাকাশযান এক্স-৩৭বি। ছবি : সংগৃহীত

আবারও মহাকাশ সফরে যেতে চলেছে আমেরিকার বায়ুসেনার রহস্যময় মহাকাশযান এক্স-৩৭বি, যা পরিচিত ‘সুপার সিক্রেট’ বিমান হিসাবেও। আমেরিকার বায়ুসেনা এবং বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘স্পেসএক্স’-এর তরফে যৌথ ভাবে বিমানটি মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে।

আগে জানানো হয়েছিল, ১১ ডিসেম্বর ওই যান মহাকাশে পাঠানো হবে। তবে পরবর্তীতে সেই পরিকল্পনা বদলে যায়। আগামী ২৮ ডিসেম্বর আমেরিকার রহস্যে ঘেরা বিমানের মহাকাশে উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা।

ফ্লোরিডায় নাসার মহাকাশ বিমান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ‘কেনেডি স্পেস সেন্টার’ থেকে একটি ফ্যালকন হেভি রকেটে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দেবে সেই বিমান।

আমেরিকার বিমানবাহিনীর মানববিহীন বিমানকে নিয়ে বহু রহস্য রয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথে এখনও পর্যন্ত পাঁচটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে পাঠানো হয়েছে এক্স-৩৭বিকে।

প্রতি বার সেই মহাকাশযানের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে গোপন পেলোড। যদিও সেই পেলোডে কী থাকে, তা কখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি।

নাসার রোবোটিক মহাকাশযানটি নাসার বিখ্যাত ‘স্পেস শাটল’-এর মতোই আকারে অনেক ছোট। যানটি প্রায় ২৯ ফুট লম্বা এবং ৯.৫ ফুট চওড়া। ডানার দৈর্ঘ্য ১৫ ফুটের কাছাকাছি।

যে পেলোড সেই বিমানের সঙ্গে পাঠানো হয়, তা প্রায় ৭ ফুট লম্বা এবং ৪ ফুট চওড়া। প্রতি অভিযানের সময় মহাকাশযানটির ওজন থাকে পাঁচ হাজার কিলোগ্রামের কাছাকাছি।

এই মহাকাশ অভিযান নিয়ে এক সময় বহু প্রশ্ন ওঠায় আমেরিকার বায়ুসেনা এক বার এক বিবৃতিতে বলেছিল, ‘এক্স-৩৭বির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো মহাকাশে ভবিষ্যতের জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখা এবং অভিযান সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা নিয়ে গবেষণা চালানো।’

নাসার ‘স্পেস শাটল’-এর মতোই, সৌরচালিত এক্স-৩৭বি মহাকাশ বিমানটি রকেটের সাহায্যে উড়ে যায়। ক্ষুদ্র মহাকাশযানটি ১৭৭ থেকে ৮০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

১৯৯৯ সালে আমেরিকার গবেষণা সংস্থা নাসা প্রথম এক্স-৩৭ অভিযান শুরু করে, যা প্রাথমিক ভাবে দুটি মহাকাশযান তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। একটি ‘অ্যাপ্রোচ অ্যান্ড ল্যান্ডিং টেস্ট ভেহিকল’ (এএলটিভি) এবং অন্যটি ‘অরবিটাল’ যান৷

এর পর ২০০৪ সালে আমেরিকার বায়ুসেনার কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে নাসা। বায়ুসেনার ‘ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (দর্প)’-র হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রকল্পটি।

২০০৬ সালে এএলটিভি মহাকাশযানের কাজ শেষ করে দর্প। বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করে দেখাও হয়। কিন্তু নাসার পরিকল্পনা করা অরবিটাল কখনও তৈরিই হয়নি। তবে সেই অরবিটাল যানের অনুপ্রেরণা থেকেই এক্স-৩৭বি তৈরি হয়।

এক্স-৩৭বি যানটির দায়িত্ব যায় আমেরিকার বায়ুসেনার কাছে। যানটি এখন সে দেশের বায়ুসেনার ‘র‍্যাপিড ক্যাপাবিলিটিস অফিস’ দ্বারা চালিত হয়।

দুটি ভিন্ন এক্স-৩৭বি বিমান মহাকাশে মোট পাঁচটি অভিযানে গিয়েছে। যেগুলি পরিচিত ওটিভি (‘অরবিটাল টেস্ট ভেহিকেল’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ)-১, ওটিভি-২, ওটিভি-৩, ওটিভি-৪ এবং ওটিভি-৫ নামে।

আমেরিকার ‘অ্যাটলাস ভি’ রকেটটির পিঠে চড়ে প্রথম চারটি অভিযানে গিয়েছিল এক্স-৩৭বি। পঞ্চম অভিযানটির সময় ব্যবহার করা হয়েছিল আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ সংস্থা ‘স্পেসএক্স’-এর ফ্যালকন-৯ রকেটকে।

ওটিভি-১ অভিযানটি ২০১০ সালের এপ্রিলে হয়েছিল। ২২৪ দিন সেটি মহাকাশে ঘুরতে থাকে। ওটিভি-২ অভিযান চলেছিল এর প্রায় দ্বিগুণ সময় ধরে। উৎক্ষেপণের পর প্রায় ৪৬৮ দিন মহাকাশে কাটিয়েছিল এক্স-৩৭বি। ২০১২ সালের জুনে সেটি পৃথিবীতে ফিরে আসে। এর পর ওটিভি-৩ এবং ওটিভি-৪ অভিযানের সময় মহাকাশযানটি আরও বেশি সময় মহাকাশে কাটিয়ে ফিরে আসে। চতুর্থ অভিযানের সময় যানটি ৭১৮ দিন মহাকাশে ছিল।

২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পঞ্চম অভিযানে গিয়েছিল এক্স-৩৭বি। ৭৮০ দিন মহাকাশে কাটিয়ে ফিরে আসে সেই যান।

কিন্তু কেন এই বিমান রহস্যজনক? এক্স-৩৭বি এবং এর পেলোডগুলি নিয়ে বার বার সাবধানী হতে দেখা গিয়েছে নাসাকে। এই মহাকাশযান নিয়ে বহু জল্পনাও রয়েছে।

জল্পনা রয়েছে, এক্স-৩৭বি বিমানটি আদতে এক বিশেষ অস্ত্র। যার অন্যান্য দেশের উপগ্রহগুলোর ছবি তোলার এবং ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে।

তবে মহাকাশযানটি খুব ছোট হওয়ায় অন্য উপগ্রহে সহজেই নজরদারি চালাতে পারে বলেও মনে করা হয়। যদিও বিজ্ঞানীদের দাবি, আকারে ছোট হওয়ায় অন্য উপগ্রহের ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই এক্স-৩৭বি-র।

মহাকাশযানটি এক বার অভিযানে গেলে কেন এত দিন মহাকাশে কাটায় তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। সেটি মহাকাশে কী করে, তার-ও কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

আবার অনেকের দাবি, প্রতিটি অভিযান শেষে এক্স-৩৭বি পৃথিবীতে পৌঁছলে বিজ্ঞানীরা তেজস্ক্রিয়তা রোধী পোশাক পরে বিমানের অন্দরে যান। তা হলে কী মহাকাশ থেকে কোনও বিশেষ পদার্থ খুঁজে নিয়ে আসে এক্স-৩৭বি? রয়েছে ধোঁয়াশা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ডিমলার বন্যা রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে

৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

তিস্তার পানির তোড়ে ভেঙে যেতে পারে ফ্লাইড বাইপাস সড়কটি

বজ্রপাতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

দুই বাংলাদেশি যুবককে ফেরত দিল বিএসএফ

বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী জনগণের পাশে রয়েছে : নীরব

শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা আজ

ছক্কার ঝড় তুলে ম্যাচসেরা সাইফের মুখে আত্মবিশ্বাসের কথা

আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করে তৃপ্ত জাকের

১০

আবারও ভারতের কাছে কুপোকাত পাকিস্তান

১১

সাবেক যুবদল নেতার উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার 

১২

আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা

১৩

কাশিয়ানীতে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

১৪

দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চান মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীরা

১৫

নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি : লায়ন ফারুক 

১৬

সাইফ ঝড়ে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

১৭

আফগানদের বিরুদ্ধে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

১৮

বৃষ্টিসহ আগামী ৫ দিনের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

১৯

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও কার্টিন ইউনিভার্সিটির চুক্তি স্বাক্ষর

২০
X