দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বেসিসের নির্বাচন আগামী বুধবার (৮ মে) । তবে নির্বাচনী প্রচারে ঘটেছে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। বেসিস কার্যালয়ের পক্ষে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন’বিষয়ক কনটেন্ট তৈরিতে মেট্রোরেল ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে কনটেন্ট তৈরি হয়েছে একটি প্যানেলের নির্বাচনী প্রচারে। আর এই কাজটি করেছে বেসিসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদের নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘টিম ওয়ান’।
নিজ পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে দেশের গর্বের সম্পদ মেট্রোরেলের এমন ব্যবহারে ক্ষুব্ধ বেসিসের সাধারণ সদস্য এবং অন্যান্য প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এমনকি ‘টিম ওয়ান’ প্যানেলের অনেক সদস্যও বিষয়টি জানতেন না বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের কাছে বেসিস নির্বাচন বরাবরই আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। আগামী ৮ মে গুলশানের শুটিং ক্লাবে দিনব্যাপী এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ সদস্য থেকে আটজন এবং সহযোগী, অ্যাফিলিয়েট এবং আন্তর্জাতিক সদস্য ক্যাটাগরিতে ১ জন করে মোট ১১ জন সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে নির্বাচন থেকে।
এবারের নির্বাচনে তিনটি প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা, যার একটি ‘টিম ওয়ান’। দেখা যায়, গত ১ মে রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে নিজ ফেসবুকে ‘টিম ওয়ান’ এর প্রচারে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন রাসেল টি আহমেদ। ভিডিওতে রাসেল এবং প্যানেলের বাকি সদস্যরা নির্বাচনে বিজয়ী হলে সদস্যদের জন্য কী কী করবেন সে বিষয়ে ওয়াদামূলক বক্তব্য দেন।
ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ভিডিও তৈরিতে মেট্রোরেল, মেট্রোরেলের স্টেশন এবং প্ল্যাটফর্মসহ অন্যান্য অবকাঠামো ব্যবহৃত হয়েছে। মেট্রোরেলের এমন ব্যবহারে অর্থ প্রদান সাপেক্ষে আগে থেকে আবেদন করে অনুমতি নিতে হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিগত ৯ এপ্রিল মেট্রোরেলের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বরাবর আবেদন করেন রাসেল টি আহমেদ।
আবেদনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে বেসিসের সভাপতি হিসেবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ২০ এপ্রিল বেসিস এরই তত্ত্বাবধানে মেট্রোরেল এ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন’ নিয়ে বেসিস একটা অডিও ভিজুয়াল বানানোর জন্য মেট্রোরেলের একটি স্থির বগিতে দুই ঘণ্টা, একটি চলন্ত বগিতে দেড় ঘণ্টা ও মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে শুটিং করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন জানাচ্ছি।
বেসিসের পক্ষে আবেদন করে নির্বাচনী প্রচারে মেট্রোরেল ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল এর ‘এমআরটি-৬’ প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) খোন্দকার এহতেশামুল কবীর কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের ব্যবহারে অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয়। তারাও তিন লক্ষাধিক টাকা দিয়ে এর অনুমতি নিয়েছে। অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় দেখা হয় যেমন কনটেন্ট দেশবিরোধী কিনা এবং নিয়মবহির্ভূত কিছু করা হচ্ছে কি না। তারা সেখানে নির্বাচনী প্রচারে কনটেন্ট করবে কি না বিষয়টি দেখা হয়নি।
রাসসেল টি আহমেদের বেসিস সভাপতির পদের এমন অপব্যবহারে ক্ষুব্ধ সাধারণ সদস্য এবং অন্যান্য প্রার্থীরা। সাধারণ সদস্য শ্রেণির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ কালবেলাকে বলেন, তিনি যে কাজগুলো করছেন তার কোনোটাই বিধিসম্মত হচ্ছে না। এটা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এ ধরনের কনটেন্ট তিনি আগে করতে পারতেন, ৮ মাস আগে করতে পারতেন। নির্বাচনের সময় পারেন না। ওনার জায়গায় আমি থাকলে আমি অন্তত করতাম না।
বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাসোসিয়েশনের প্রয়োজনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে চিঠি দিতেই পারেন। আবার প্যানেলের জন্য দিলে সেই পরিচয়ে দেওয়াটাই কাম্য। এখানে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো বিষয়ে চলে আসে।
এ বিষয়ে বেসিস নির্বাচনের প্রধান কমিশনার নুরুল কবীরের সঙ্গে দুই দফা যোগাযোগ করা হলেও একটি অনুষ্ঠানে থাকার অজুহাতে কথা বলেননি। আরেক নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ মামনুর কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি হোয়াটস অ্যাপে বিস্তারিত জানাতে বলেন। বিষয়টি জেনে বুঝে মন্তব্য করবেন বলে তিনি জানান।
টিম ওয়ান প্যানেলের আরেক সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বী বিপ্লব ঘোষ রাহুল কালবেলাকে বলেন, তিনি (রাসেল) কীভাবে মেট্রোরেলের অনুমতি নিয়েছেন জানি না। শুনেছিলাম পুরো কাজটি এজেন্সি করেছে।
মন্তব্য করুন