প্রথমবারের মতো ব্রিকসের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সম্মেলন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে ব্রিকসের বিভিন্ন সম্মেলনে সক্রিয় থাকলেও, এবার তার অনুপস্থিতি কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খবর সিএনএন।
চীনের হয়ে এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং। বিশ্লেষকদের মতে, শি’র অনুপস্থিতি যদিও তাৎপর্যপূর্ণ, তবে এতে চীন ব্রিকসের গুরুত্ব কমিয়ে দেখছে এমন কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।
চলতি বছর সম্প্রসারিত ব্রিকসে নতুন ৫টি দেশ- মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইরান যোগ দেওয়ার পর এটি প্রথম সম্মেলন। এই প্রেক্ষাপটে শি’র অনুপস্থিতি কূটনৈতিকভাবে লক্ষণীয়।
কেন যাচ্ছেন না শি?
চীনা প্রেসিডেন্টের না যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ দেখছেন বিশ্লেষকরা। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক চোং জা ইয়ান বলেন, ‘ব্রিকস গোষ্ঠী চীনের কৌশলগত পররাষ্ট্রনীতির অংশ। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির ফলে চাপ কিছুটা কমায় শি এখন অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।’
চীনের অর্থনীতিতে ধীরগতির লক্ষণ, বেকারত্ব বৃদ্ধি, রিয়েল এস্টেট খাতের বিপর্যয়সহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে শি নিজ দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কৌশলে মন দিচ্ছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, এই বছরের ব্রিকস সম্মেলন থেকে বড় কোনো অগ্রগতি বা নীতিগত পরিবর্তনের আশা কম- এটিও শি’র সশরীরে না যাওয়ার অন্যতম কারণ।
অন্য নেতারাও অনুপস্থিত
শি জিনপিং একমাত্র অনুপস্থিত নেতা নন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এবার ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। ইউক্রেন যুদ্ধসংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় ব্রাজিল সফর করছেন না তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি কেবল ব্রিকস সম্মেলনে নয়, রাষ্ট্রীয় সফরেও অংশ নিচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাও সশরীরে অংশ নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোও সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তবে অন্যান্য নতুন সদস্য দেশগুলোর অংশগ্রহণ এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি।
চীন-ব্রাজিল সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না
চীনা প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিকে ব্রাজিল নেতিবাচকভাবে দেখবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নভেম্বর মাসে জি২০ সম্মেলনে শি ব্রাজিল সফর করেছিলেন, অপরদিকে মে মাসে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা চীন সফর করেছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশ দৃঢ়ই রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শি’র অনুপস্থিতি কূটনৈতিক বার্তা না হয়ে বরং সময়োপযোগী বাস্তবতার প্রতিফলন। চীন এখন বৈশ্বিক প্রভাবের পাশাপাশি নিজেদের অর্থনৈতিক ভীত শক্ত করতে চায় এবং এই মুহূর্তে সেটাই তাদের অগ্রাধিকার।
মন্তব্য করুন