কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কীভাবে নাইটক্লাব থেকে চার্চের শীর্ষে পৌঁছালেন পোপ ফ্রান্সিস?

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ইতিহাসের প্রথম লাতিন আমেরিকান ও প্রথম জেসুইট পোপ—পোপ ফ্রান্সিস। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ইতিহাসের প্রথম লাতিন আমেরিকান ও প্রথম জেসুইট পোপ—পোপ ফ্রান্সিস। ছবি : সংগৃহীত

৮৮ বছর বয়সে মারা গেলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ইতিহাসের প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ ফ্রান্সিস। স্থানীয় সময় সোমবার (২১ এপ্রিল) ভোরে ভ্যাটিকান সিটির কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। খবর বিবিসি।

পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে এক দরিদ্র পরিবারে। নাম রাখা হয়—জর্জ মারিও বেরগোগলিও। তবে তার শিকড় ছিল ইতালিতে। ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে তার বাবা-মা ইতালি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন আর্জেন্টিনায়। সেখানেই জন্ম হয় জর্জের।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড় জর্জ তরুণ বয়সেই পরিবারের হাল ধরেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য জীবনের অনেকটা সময় ঝাড়ুদার এবং নাইটক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করতে হয়েছে তাকে। কে জানত, জীবিকার তাগিদে নাইটক্লাব পাহারা দেওয়া সেই তরুণ একদিন হবেন বিশ্বের দেড়শ কোটি খ্রিস্টান বিশ্বাসীর আধ্যাত্মিক নেতা?

শ্রমজীবী এই তরুণ থেমে থাকেননি। পরিশ্রমের পাশাপাশি চালিয়ে যান লেখাপড়া। রসায়নে স্নাতক শেষ করে কাজ নেন স্থানীয় একটি কারখানায়। সেখানে কাজ করার সময় তার পরিচয় হয় এস্তার বালেস্ত্রিনোর সঙ্গে—যিনি ছিলেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার এক বলিষ্ঠ কণ্ঠ। পরে এস্তারকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করা হয়, তার মৃতদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জর্জ পরে যোগ দেন সোসাইটি অব জিসাস নামে ক্যাথলিক ধর্মীয় গোষ্ঠীতে, যাদের জেসুইট বলা হয়। জেসুইটদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি দর্শন, সাহিত্য এবং মনোবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর যাজকত্ব অর্জন করেন এবং দ্রুত পদোন্নতির মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে হয়ে ওঠেন আর্জেন্টিনার প্রাদেশিক প্রধান।

২০১৩ সালে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ পদত্যাগ করার পর কার্ডিনাল জর্জ মারিও বেরগোগলিওকে পোপ নির্বাচিত করা হয়। ইতিহাসে তিনিই প্রথম জেসুইট পোপ এবং প্রথম লাতিন আমেরিকান, যিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হন। সারা বিশ্ব তাকে চিনে নেয় নতুন নামে—পোপ ফ্রান্সিস।

ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন একেবারে সাধারণ ও হৃদয়বান। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন স্থানীয় ট্যাঙ্গো নাচের অনুরাগী এবং ফুটবল ক্লাব সান লোরেঞ্জোর একজন বড় সমর্থক।

ছোটবেলায় নিউমোনিয়ায় গুরুতর আক্রান্ত হয়ে তার একাংশ ফুসফুস কেটে ফেলা হয়েছিল। সারা জীবনই সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন তিনি। বার্ধক্যে ভুগতেন হাঁটুর ব্যথায়—যাকে তিনি মজা করে বলতেন, শারীরিক অপমান।

জীবনের শুরুটা ছিল কঠিন সংগ্রামে, আর শেষটা—বিশ্বাস, সহমর্মিতা আর মানবতার এক অনন্য প্রতীক হয়ে। পোপ ফ্রান্সিস রেখে গেলেন অনুপ্রেরণার এক অনবদ্য অধ্যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কাজ না করেই বিল উত্তোলন, প্রতিবেদন জমা হয়নি ৫ কর্মদিবসেও

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও বজ্রসহ ভারী বর্ষণের আভাস

চট্টগ্রাম প্রতিদিন সম্পাদক আয়ান শর্মার বাবার পরলোকগমন

জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে যুক্ত হলো বাংলাদেশ

জনগণের ভেতরে বিএনপির শেকড় : প্রিন্স

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি সেনা নিহত

ইরানের জালে আটক মোসাদের ৬ এজেন্ট

প্রতীকসহ নিবন্ধন ফেরত পাওয়ায় খুশি জামায়াত

স্কুল ভবন নির্মাণ / কাজ শেষ না করেই বিল ভাউচারে সই নেওয়ার অভিযোগ

ঢাবির পুকুরে মাছের পোনা ছাড়লেন ছাত্রদল নেতা

১০

বাংলাদেশে পুশইন, ক্ষোভ ঝাড়লেন মমতা

১১

তাহলে সান্তোসেই থাকছেন নেইমার!

১২

রিজার্ভে বড় লাফ, ছাড়াল ২৭ বিলিয়ন ডলার

১৩

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুতই, ইউজিসির আশ্বাস

১৪

নারায়ণগঞ্জে ২ খুন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু থেকে চিরশত্রু

১৫

ইআবি ও ইবনে সিনার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা চুক্তি স্বাক্ষর

১৬

উপজেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন বাতিল 

১৭

কলম্বোতে যেমন হতে পারে বাংলাদেশের একাদশ

১৮

স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা : হাসনাত

১৯

পলাতক এসআইকে পিটিয়ে পুলিশে হস্তান্তর

২০
X