ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ এবং ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিতের উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এটি হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত কোনো দেশের নেওয়া প্রথম এমন পদক্ষেপ, যা সরাসরি ইসরায়েলি দখলদার রাষ্ট্র ও তার অর্থনৈতিক স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আয়ারল্যান্ড সরকার এক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি দখলদার অঞ্চলে পরিচালিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। এই লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবিত বিল আগামী মাসেই (জুন) আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে আলোচনার জন্য তোলা হবে।
আয়ারল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দখলদার শক্তির সঙ্গে বাণিজ্য করে চলা নৈতিক নয়। তাই আমরা ইসরায়েলি বসতি ও দখলকৃত অঞ্চল থেকে পরিচালিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধে আইন করতে চাই।
গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে হ্যারিস বলেন, অবরোধের কারণে বহু শিশু অনাহারে ভুগছে। খাদ্য ও ওষুধকে একটি যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি জানান, আয়ারল্যান্ডের পক্ষ থেকে পাঠানো বহু ত্রাণবাহী ট্রাক রাফা সীমান্তে আটকে আছে ৮০ দিনেরও বেশি সময় ধরে। এসব ত্রাণের গন্তব্য ছিল গাজার ক্ষতিগ্রস্ত ও অনাহারপীড়িত জনগোষ্ঠী।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে হ্যারিস বলছেন, এই পরিস্থিতিতে কেবল পর্যালোচনা যথেষ্ট নয়- প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।
ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবসা করা সম্ভব নয়। তাই আমরা চুক্তি স্থগিত করার আহ্বান জানাচ্ছি, বলেন হ্যারিস।
হ্যারিস আরও অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলের দমন-পীড়ন থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন সময় এসেছে বিশ্বকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের, জোর দিয়ে বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, আয়ারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত কেবল একটি দেশের নীতি পরিবর্তন নয়, এটি একটি নৈতিক অবস্থান, যা আন্তর্জাতিক আইন, মানবিক মূল্যবোধ ও গণহত্যা প্রতিরোধের নীতিকে সামনে নিয়ে আসে। এটি অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি বার্তা হতে পারে- গণহত্যা চালানো রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া কি আদৌ মানবিক?
মন্তব্য করুন